এক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ!
রাজশাহী প্রতিনিধি: ||
২০২২-০৯-২২ ০৮:৪৪:৫৮
দুর্গাপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা পরিচালনায় অনিয়ম, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়মসহ নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় উত্থাপিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২০১০ সাল হতে সরকারি বিধি অমান্য করে বেসরকারি সাগর হজ্জ এজেন্সি প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন।তিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হয়েও ২০১০সাল হতে প্রতি বছর হজ্জ যাত্রীদের মোয়াল্লেম হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে সৌদিআরব দেশে যান। এতে প্রায় হজ্জ সম্পন্ন করতে ৪৫দিন সময় লাগে।
তিনি ২০২২ সালে চলতি বছরে দুইবার মোয়াল্লেম এর দায়িত্ব নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্যবসায়ে দায় নিয়ে দেশের বাহিরে যান। চলতি বছরে সর্বশেষ তিনি জুলাই মাসে সাগর এজেন্সির মাধ্যমে ৪৮জন হজ্জ যাত্রীর মোয়াল্লেমেরর দায়িত্ব নিয়ে সৌদি দেশে যান।
এ সময় তিনি একটানা ৪৫ দিন প্রতিষ্ঠান বাহিরে থাকেন। এমনকি তিনি চলতি বছরে প্রায় ৮৫দিন ব্যক্তিগত কাজে প্রতিষ্ঠান বাহিরে ছিলেন।এতে প্রতিষ্ঠানের আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে।শুধু তাই নয় তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান কেউ কথা বললে নিজের ইচ্ছে মত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।সরকারি বিধি অমান্য করে নিজের খেয়াল-খুশি মতো সে প্রতিষ্ঠানে জান।প্রতিষ্ঠানটি উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে হলেও যেন দেখার কেউ নেই। এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান কোন নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। অধ্যক্ষ তার খেয়াল খুশিমতো কাজ করে চলেছেন। তিনি দিনের বেশির ভাগ সময় তার ব্যক্তিগত কাজে প্রতিষ্ঠান বাহিরে অবস্থান করেন। আর যতটুকু সময় প্রতিষ্ঠান অবস্থান করেন সেও আবার নতুন হজ্জ করা প্রার্থীদের নিয়ে অফিসে বসে দেনদরবার করেন।
এদিকে,অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তিনি গোপনে নিয়োগের আগেই নিয়োগ প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।
এমন ঘটনায় অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এদিকে মাদ্রাসাটি প্রথম শ্রেণী হতে ফাযিল ডিগ্রীর অধ্যায়নরত প্রায় ৬শত শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থী দিয়ে মাদ্রাসার নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা আদায়ের কাজ করেন এই অধ্যাক্ষ আলতাফ হুজুর। এসব টাকার কোনো হদিস পাওয়া যায় না প্রতিষ্ঠানে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজেও ব্যবহার করা হয় না বলেও জানা যায়। অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠান লক্ষ লক্ষ টাকা অনিয়ম-দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অতি দ্রুত এসব অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে প্রতিষ্ঠান ৬শত শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ।এনিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের বিরাজ চলছে। তার ভয়ে কোন শিক্ষক মুখ খুলতে পারছিনা।কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন আর চাকুরি নাই করে দিবে বলে হুমকি দেয় অধ্যক্ষ আলতাব হোসেন। এমন অভিযোগ ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের।
এদিকে, মাদ্রাসার সহকারী অধ্যক্ষ মাসুমা খাতুন অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন মোয়াল্লেম হিসেবে হাজীদের সাথে যাওয়া এবং নতুন নতুন হাজী খুঁজে হজ্জ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি প্রতিষ্ঠানর লিখিত ভাবি দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং মাঝেমধ্যে অলিখিত দায়িত্ব দিলে তাও পালন করেন বলে জানান।
যদিও অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। জেলা শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।
দুর্গাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহীদুল হক জানান,দুর্গাপুর ফাযিল ডিগ্রী মাদ্রাসা অধ্যাক্ষ আলতাব হোসেনের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি।তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতেই আমরা জানতে পারি তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ সত্যতা রয়েছে। আমরা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুর্গাপুর ফাযিল ডিগ্রী মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি আজাহার আলী জানান,অধ্যক্ষ প্রতিবছরই হজ্জের জন্য ছুটি নেয়। তিনি নতুন নতুন হাস করবেন এমন লোক খুঁজেন এবং হজ করতে নিয়ে যান। এই সুবাদে তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি ও নেনন। সভাপতি আরো জানান,প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার নাম করে একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এটা আমি শুনেছি। তবে আর কারো কাছ থেকে নিয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ব্যবস্থা আগের চাইতে অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে তাও আমি বুঝতে পেরেছি। অধ্যক্ষকে কেন্দ্র করেই শিক্ষকদের মধ্যে এক বিশৃঙ্খলা ও রয়েছে।এ বিষয়টি সমাধানের জন্য আমি জোর তাগিদ ও দিয়েছি। গভর্নিং বডির মেয়াদ বেশি নাথাকায় সে আমাকেও আর তেমন কোনো কর্ণপাত করছেন না বলেও জানান সভাপতি।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের,উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলামেরর সাথে মোবাইল ফোনে যোগায়োগ করা হলে, তিনি বলেন প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ গুলো যদি সত্যতা মিললে,তদন্তপূর্বক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357