পালকি চড়ে বিয়ে আশা পূরণ ছেলের বাবার
নাজমুল হোসেন, সিরাজগঞ্জ ||
২০২২-০৯-০৬ ১১:১৪:১১
বাঙালির ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাহক পালকি। দূর-দূরান্তের পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য পালকি ছিল প্রাচীনকালে জনপ্রিয় মাধ্যম। তবে বিয়ের উৎসবে পালকির কদর ছিল সবচেয়ে বেশি। চার বেহারার পালকির কথা এখন বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শিশু-কিশোরদের ছড়া-কবিতার বইয়ে শুধু পালকির কথা ও ছবি চোখে পড়ে। গ্রাম-বাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসা সেই পালকি এবার দেখা গেলো সিরাজগঞ্জে।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবার্টী ইউনিয়নে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায়, বর পালকিতে চড়ে বিয়ে করতে এসেছেন। পালকিতে চড়ে বিয়ে করতে এসে রীতিমতো অবাক করে দিয়েছেন কনের গ্রামবাসীকে। হারিয়ে যেতে বসা বাঙালির চিরচেনা ঐতিহ্যের স্মারক পালকিতে বরযাত্রা দেখতে এ সময় বিয়েবাড়ি ও আশপাশের সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভিড় করেন উৎসুক জনতা। এই একবিংশ শতাব্দিতে কেউ গাড়ির বদলে পালকিতে চড়ে বিয়ে করতে আসতে পারেন, সেকথা ভেবেই গ্রামের মানুষ দারুণ খুশি। তাই এই বিয়ে বাড়িতে ছিল স্থানীয় উৎসুক মানুষের ভিড়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের চরব্রাক্ষণগাঁতী গ্রামের মোঃ শফিকুল ইসলামের দুই মধ্যে বড় ছেলে সবুজ ইসলাম সঙ্গে বাগবার্ঢী ইউনিয়নের চকমিরাখোর গ্রামের আব্দুল জলিল শেখের একমাত্র মেয়ে জলি খাতুন বিয়ের অনুষ্ঠানে এই পালকির ব্যবস্থা করা হয়।
বরের বাবা জানান,আমার দাদী বলেছে। আমার নাতি বড় হলে পালকিতে বিয়ে করামু।আমি বড় হবার পরে। তখন বন্যা কারণে আমার বিয়ে হয় নৌকাতে করে। কিন্তু দাদীর সে বলা কথা আমার প্রতিদিন মনে পড়তো। আমিও সে কথা লালন করি । আমি আমার বড় ছেলেকে পালকিতে বিয়ের মধ্যে দিয়ে আমি আমার সখ পূরণ করবো। পালকি অনেক খোঁজা খোজি পর বগুড়া জেলার ধনুট উপজেলার মথুরাপুর এলাকা হতে ৬ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করে পালকি এনে আমি ও আমরা স্ত্রী নিজ এলাকায় পালকিতে চড়ে ঘুরেছি। তারপর আমার ছেলেকে বর যাত্রী সাজিয়ে বিয়ে করানোর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি।
বর সবুজ ইসলাম জানান, পালকি আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ছিল একসময়। যদিও সেটি এখন আর চোখে পড়ে না।পালকিতে না উঠলে বুঝতে পারতাম না। যে কতটুক মজা আছে। গাড়িতে চড়ছি অনেক প্রাইভেট কারে উঠছি।এটাতে চড়ি নাই কোনো দিন। পালকিতে চড়ে বিয়ে করতে এসে অনেক মজা পাইছি।
বেহারাদের সর্দার পরেশ দাস (৫০) জানান, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর পালকির জন্য তেমন ডাক পড়ে না। তবে মাঝেমধ্যে ডাক পেলে খুব ভালো লাগে। সারা বছর কৃষিসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও পালকির জন্য ডাক পড়লেই সঙ্গীরা ছুটে আসে। প্রতিটি বরযাত্রায় ২ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357