পার্বতীপুরে প্রভাবশালীদের দখলে বিপুল পরিমানের দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধার করতে প্রশাসনের তৎপরতা শুরু
মামুনুর রশিদ, পার্বতীপুর(দিনাজপুর) ||
২০২২-০৮-২৩ ১০:০১:৩০
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরের জায়গাসহ বিপুল পরিমানের দেবোত্তর সম্পত্তি একটি প্রভাবশালী ভূমিদশ্যু চক্র দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বার্থান্বেষী ওই চক্র মন্দিরের স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমে ওই জায়গার মাটি বিক্রি করে সেখানে এক বিশাল জলাশয় সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ দায়েরের পর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ওই সম্পত্তি উদ্ধারে মাঠে নেমেছে। ঘটনাস্থল উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ধোপাকল হিন্দুপাড়া গ্রাম।
গ্রামের বাসিন্দা নৃপেন্দ্রনাথ কর্তৃক দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দায়ের করা লিখিত অভিযোগের সূত্র ধরে গ্রামটিতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, মন্দিরের জায়গাসহ কয়েক বিঘা জমিতে তৈরি করা হয়েছে বিশাল পুকুর বা জলাশয়। জলাশয়ের চারপাশে গড়ে উঠেছে প্রভাবশালী ভূমিদশ্যুদের বসতি ও তাদের চাষকৃত ফসলী মাঠ।
নৃপেন্দ্রনাথ ও গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি মফিজুল ইসলাম এবং সাইফুল ইসলাম জানায়, ধোপাকল মৌজার সাবেক ৪০৪৭ (বর্তমান ২৬২৩) নং দাগের ১৯শতক জমিতে ছিল একটি শিব মন্দির। মন্দিরটি ব্রিটিশ আমলে স্থাপন করা হয়েছিল। এর আয়তন বাড়াতে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার অনুষ্টান খরচের অর্থের সংস্থান করতে তৎকালীন সময়ের স্বধর্মীয় ধনাঢ্য ৬ ব্যক্তি ধোপাকল মৌজার সাবেক ৪০৪৬,৪০৪৭,৩৭৮১ ও ৪০০৮/৪৪৩১ দাগসহ মোট ১২টি দাগের ৫একর ৪৪ শতক জমি মন্দিরের নামে দান করেছিলেন। জমি দানকারীরা হলেন, অমূল্য চরন, রাম চন্দ্র সরকার, কালি প্রসন্ন, মহিন্দ্র নাথ, দ্বারিকা নাথ ও অনিল চন্দ্র।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এই ৬ ব্যক্তিকেই মন্দিরটি পরিচালনার জন্য সেবাইত (পুজারী) হিসেবে মনোনীত করেন। এসব ব্যক্তি তাদের জীবদ্দশায় ওই মন্দিরটির সেবাইতকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনও করে থাকেন। ৬২ সালের ভূমি রেকর্ডে ওইসব ব্যক্তিদের নামও সেবাইতকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
জমি দানকারী কালি প্রসন্নের নাতি নৃপেন্দ্র নাথ, রাম চন্দ্র এর নাতি অশোক কুমার ও বিধান চন্দ্রসহ অন্যান্য গ্রামবাসীর অভিযোগ, তাদের নানা ও অন্যান্য সকল সেবাইতকারীদের মৃত্যুর পর স্বার্থান্বেষী হিন্দু ও মুসলিমদের কতিপয় ব্যক্তি একে অপরের যোগসাজসে সম্পত্তিগুলি ভাগ বাটোয়ারা করে ব্যক্তিগতভাবে ভোগ দখল শুরু করেন। ক্রমান্বয়ে অনেকেই জাল কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ও টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয় অনেক সম্পত্তি। এভাবে বিভিন্ন হাত বদল হয়ে বর্তমানে ৪১ ব্যক্তি ওইসব সম্পত্তি ভোগ দখল করছেন। সুকৌশলে জরিপ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা সম্পত্তিসমুহ নিজেদের নামে রেকর্ড করেও নিয়েছেন।
নৃপেন্দ্রনাথ আরও জানায়, প্রভাবশালী ওই চক্রটির পেশিশক্তির ভয়ে কেউ সেটেলমেন্ট অফিসে কোন প্রকার আপত্তি বা অভিযোগ করার সাহস পায়নি। এই সুযোগেই চক্রটি সকল দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যক্তিগত নামে রেকর্ডভূক্ত করার সুযোগ পায়। তিনি আরও বলেন, ওই চক্রটি দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করেই ক্ষান্ত হননি। তার নানার নামীয় আরও বিপুল পরিমানের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভয়ভীতি দেখিয়ে জবর দখল করে রেখেছেন। চক্রটি এসব জবর দখলের ঘটনা ঘটায় ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ বিগ্রহ পরিস্থিতির সময়।
দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধারের বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও জাতীয় সংসদে নতুন আইন প্রনয়নের সংবাদ পেয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে এ বিষয়ে সাহস সঞ্চারিত হয়। তাদের পক্ষ থেকেই নৃপেন্দ্রনাথ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নির্ধ্বারিত আবেদন ফরমে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করেন।
জেলা প্রশাসক দ্রæত তদন্তপূর্বক দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টরের মাধ্যমে (আর,ডি,সি) পার্বতীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) বরাবরে নির্দেশনা পত্র প্রেরণ করেন। পত্রটি গতকাল সোমবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে এসে পৌছেছে।
পার্বতীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) প্রীতম শাহা পত্র প্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রয়, অন্যের নিকট হস্তান্তর বা কোন ব্যক্তি নামে রেকর্ডভূক্ত এবং খারিজ করা বেআইনী। অভিযোগ প্রমানিত হলে আইনীভাবেই সকল সম্পত্তি উদ্ধার করা হবে।
দেবোত্তর সম্পত্তি ভোগ দখলকারী পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ধোপাকল হিন্দুপাড়া গ্রামের বিমল চন্দ্র সরকারের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, তিনিসহ যেসব ব্যক্তি দেবোত্তর সম্পত্তি ভোগ দখল করছেন সেসব সম্পত্তি তারা জমি দানকারীদের ওয়ারিশগনের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। দখল সূত্রে জরিপ অধিদপ্তর(সেটেলমেন্ট ডিপার্টমেন্ট) তাদের নামে রেকর্ড করে দেয়।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357