সৃস্ট লঘুচাপ ও জোয়ারের প্রভাবে ভোলায় নিম্মাঞ্চল প্লাবিত; পানিবন্দি মানুষ, ট্রলারডুবি

মোঃ জহিরুল হক, ভোলা || ২০২২-০৮-১১ ০৭:০৯:০৭

image
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপ ও জোয়ারের প্রভাবে উপকূলীয় জেলার ভোলার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে । জেলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে স্বাভাবিক জোয়ার থেকে ৪-৫ ফুটের অধিক উচ্চতায় পানি বেড়ে যায়। এতে জেলার বেরী বাধের বাহিরের ২০-২৫টি চরের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে অসহায় হয়ে পড়ছে মানুষ।গত সোমবার থেকে বৃস্টি ও জোয়ারের কারনে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িঁবাধের পাড়ের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এদিকে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে উত্তাল হয়ে পড়েছে বঙ্গোবসাগর। এর মধ্যে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে পড়ে ৩টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ৯জন জেলে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে চরফ্যাশন উপজেলার বয়ার চরে আবুল কালাম ও মো: ইউসুফ মাঝির দুটি ট্রলার ডুবে যায়। খবর পেয়ে অন্য ট্রলারের মাঝিরা ৫জনকে জীবিত উদ্ধার করে। এখনও ইউসুফ মাঝির ট্রলারের ৮ জেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়াও দৌলতখানের এক জেলে নিখোঁজ রয়েছে। ভেসে গেছে জাল ও ট্রলারসহ মালামাল। নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে কাজ করছে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন - ২ নির্বাহী প্রকৌশলি হাসান মাহমুদ বুধবার ইনকিলাবকে জানান লগুচাপ ও জোয়ারের প্রভাবে বেড়িঁবাধেরর বাহিরের এলাকা প্লাবিত হয়েছে তবে আজ বুধবার পর্যন্ত লগুচাপ কিছুটা কমে গেছে। প্লাবিত এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে।বেরীবাধের কোথাও ভেঙ্গে গেলে বা কোন সমস্যা হণে তাৎক্ষনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে জোয়ারে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট তলিয়ে গেছে। ফলে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল বুধাবার পর্যন্ত তা চালু হয়নি। এদিকে বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে মাছ ধরাতে গিয়ে দুইদিনে ৩টি ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় ৯ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গোপসাগরের শিবচর, মহিপুর পয়েন্টে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। ঢালচরের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান ঢালচর থেকে আবুল কালাম, ইউসুফ মাঝির দুটি বোট মাছ ধরতে সাগরে যায়। মাছ ধরতে গিয়ে ১২ জেলে নিয়ে সাগরে ধমায় (ঢেউ এর কবলে পড়ে) ডুবে যায়। পরে পাশ্ববর্তী আরেকটি ট্রলার এসে উদ্ধার করে। অপরদিকে একই এলাকার ইউসুফ মাঝির ১৩ জন জেলের আরেকটি ট্রলার ডুবে যায়। এতে ৫ জন জেলে উদ্ধার হলেও এখনও পর্যন্ত ৮জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। এরা হলেন- মো: আব্দুর রহমান, ইসমাইল, রাছেল, তসলিম, আব্দুল মান্নান, জুয়েল, নজু, ছাদেক প্রমুখ। অপরদিকে দৌলতখানের সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে ইসমাইল মাঝির একটি ট্রলার ডুবে গিয়ে নিজাম (৩২) নামের এক জেলে সাগরে ডুবে নিখোঁজ হয়। ভোলার চর আইচার মৎস্য ব্যবসায়ীদের থেকে জানা যায় নদীতে মাছ না থাকায় বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ভোলার ঢালচরের আবু কালাম, ইউসুফ মাঝি ও দৌলতখানের ইসমাইল মাঝি ফিসিং বোটটি গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করার জন্য যায়। নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় ৩টি ট্রলার ডুবে যায়। এই ঘটনায় স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় ২৫ জন জেলে উদ্ধার হলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছে ইউসুফ মাঝির ফিসিং বোটের ৮ জেলে। চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান জানান, ডুবে যাওয়া ট্রলারের নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধার করতে কোস্ট গার্ডকে বলা হয়েছে। তারা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন, তবে বৈরী আবহাওয়ায় উদ্ধার অভিযান সমস্যা হচ্ছে। কোস্ট গার্ড সুত্র বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে উত্তালের মধ্যে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে সাগরের মাছ ধরতে গিয়ে ৬টি ট্রলার সাগরে ডুবে যায়। এসব ট্রলারে সর্বমোট ৭৫ জন জেলে ছিলো। এর মধ্যে স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় ৫৬জন জেলেদের জীবিত উদ্ধার হয়। এখন ভোলার ৯জনসহ ১৯ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন ৬টি উদ্ধার টিম নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধার করতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের পূর্ব ও পশ্চিম জোন সমুদ্রে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কোস্টগার্ড ঝুঁকি নিয়ে নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দি মানুষঃ বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ভোলায় মেঘনা নদীর পানি স্বাভাবিকের চাইতে ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের প্লাবিত হয়েছে ভোলা সদরের রাজাপুর, নাছির মাঝি, মদনপুর, কলাতলি, ঢালচর, পাতিলা, চর নিজাম, কাজিরচরসহ বেরীবাধের বাহিরের বিচ্ছিন্ন ২০-২৫ চরের কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় আছে। বেড়ী বাঁধের বাইরে অবস্থিত নিম্নাঞ্চলের শতশত বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। এসব স্থানের পানি ভাটার টানে নেমে গিয়ে আবার জোয়ারে তলিয়ে যায়। ভোলা মনপুরার কাজির চরের বাসিন্দা মো: সিরাজ হাওলাদার বলেন, লঘুচাপ ও পূর্ণিমার আগাম প্রভাবে দুইদিন ধরে কাজির চরের কয়েক শতাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এই চরে কোন আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় মানুষ এখন ঘরের মাচার উপর দিন কাটাচ্ছে। জোয়ার আসলে মাচায় উঠে। আর ভাটায় নেমে এসে। পানিতে ইতিমধ্যে এই চরের বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ পানির সংকট, খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে জোয়ারের পানিতে গবাদি পশু বাসিয়ে নিয়ে গেছে। এছাড়াও পুকুরের মাছ, ফসলি জমি, চরের মানুষের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে চরের বাসিন্দারা। চরে কোন স্থায়ী বেড়িঁবাধ না থাকায় এই সমস্যা হয়েছে বলে জানান। তাই সরকার যেন এসব চরের মানুষের জন্য আলাদা করে নজর দেন এটাই দাবী তাদের। ভোলার সদরের নাছির মাঝি এলাকার বেড়িঁবাধের বাইরে থাকা বাসিন্দা মাজেদা বেগম বলেন, একযুগেরও বেশি সময় ধরে আমরা বেড়িঁবাধের বাইরে বসবাস করছি। বেড়িবাঁধের বাইরে যারা আমরা থাকি অনেক কষ্টে থাকি। জোয়ার আসলে আমাদের সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ঘরের চুলাডা পর্যন্ত পানিতে ডুইব্বা গেছে। এহন রান্না করুম কেমনে আর খামু কি। সরকার যদি নদী পাড়ে শক্ত করে একটা রিং বেড়িঁবাধ করে দিতো তাহলে আর পানিতে কষ্ট পাইতামনা। বেড়িঁবাধে থাকা আব্দুল মতিন বলেন, পানির তীব্র চাপে নাছির মাঝে বেড়িঁবাধ নিচ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে করে আমরা সাধারন মানুষ আতংকের মধ্যে আছি। এই বেড়িঁদ্রুত সংস্কার না করলে পানির আরও চাপ বাড়লে বেড়িঁবাধ ভেঙ্গে পানি শহরের মধ্যে প্রবেশ করবে। তখন মাছের ঘের, ফসলি জমি, মানুষের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়াও পানির চাপে ভোলার তুলাতুলি, ইলিশার বেশ কিছু পয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয়র জানান। ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন - ১ নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, বুধবার ইনকিলাবকে জানান বঙ্গোপসাগর লঘুচাপ ও পূর্ণিমার আগাম প্রভাব গত দুইদিন ধরে মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদী উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের সময় উপকূলের নদ-নদীতে আগের চেয়ে বেশি ৪ - ৫ ফুট পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বেশিরভাগ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রবন্দরে ৩নম্বর এবং নদী বন্দরে ১নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ বিদ্যমান থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এটি মৌসুমী পানি প্রবাহ। আশা করা যাচ্ছে দুই দিন পর নিরাপদ সীমায় নামবে নদীর পানি প্রবাহ। এদিকে, এ ব্যাপারে বিআইডব্লটিএ সহকারি পরিচালক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, জোয়ারে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট তলিয়ে গেছে। ফলে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচল। জোয়ারে পানি নেমে গেলে ভাটা শুরু হলে ঘাটটি মেরামত করা হবে।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com