সংবিধান সম্মত শব্দ চয়ন’-এর দোহাই দিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সংবিধানবিরোধী ও অপমানজনক পরিপত্র

পলাশ চাকমা, রাঙামাটি || ২০২২-০৮-০১ ১০:৫৪:২১

image
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের বরাতে ১৯ জুলাই ২০২২ খ্রিঃ তারিখে তথ্য মন্ত্রণালয় ‘’সংবিধান সম্মত শব্দ চয়ন প্রসঙ্গে’’ শীর্ষক একটি পরিপত্র জারি করেছে। উক্ত পরিপত্রে আসন্ন ৯ আগস্ট, আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত টকশো’তে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ ও সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্কতা’র দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার না করার অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র সংবিধান পরিপন্থী এবং দেশের মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক সমাজ তথা সমস্ত আদিবাসী জনগণের জন্য চরম অপমানজনক। আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্রের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ শব্দগুচ্ছ সন্নিবেশ করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ বলে ‘তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশে রাষ্ট্রের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু টকশো বা অন্য কোন মিডিয়ায় বা আলোচনায় ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না এমন বিধি নিষেধ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ বা দেশের অন্য কোন আইনে বলা নেই। বরং তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র জারির মাধ্যমে সংবিধান স্বীকৃত বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে। বাংলাদেশ একটি বহু জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির দেশ। এই বৈচিত্রকে ধারণ করে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ সম্মানজনকভাবে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবী জানিয়ে আসছি। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর সময় এই বিষয়ে যথাযথভাবে মীমাংসার সুযোগ থাকলেও আদিবাসীদের দাবী উপেক্ষা করে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী’ ও ‘সম্প্রদায় শব্দগুচ্ছ’ সন্নিবেশ করা হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী একটি অপমানজনক শব্দ। ‘ক্ষুদ্র’ বলার মধ্য দিয়ে সেই জাতিগোষ্ঠীর লোকজনকে চরমভাবে হেয় করার সামিল যা সংবিধান পরিপন্থী। সংখ্যায় কম হোক কিংবা বেশি হোক, কোন জাতিগোষ্ঠী কখনো ক্ষুদ্র বা বৃহৎ হিসেবে পরিচিত হতে পারে না। কোন জাতিগোষ্ঠী কী নামে পরিচিত হতে চায়, সেটা আইন দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না। আত্ম পরিচিতিই (ঝবষভ-রফবহঃরভরপধঃরড়হ) যে কোন জাতিগোষ্ঠী পরিচিতি নির্ধারণের মানদন্ড। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অনেক চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকার অনুস্বাক্ষর করেছে। সেগুলোর মধ্যে আইএলও কনভেনশন ১০৭ ও জীব বৈচিত্রচুক্তি ১৯৯২ উল্লেখযোগ্য। সেসব চুক্তিতে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অধিকন্তু বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন নীতিমালা ও নথিপত্রে যেমন অষ্টম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনায় আইএলও কনভেনশন ১৬৯ ও জাতিসংঘের গৃহীত আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রে (টহরঃবফ ঘধঃরড়হং উবপষধৎধঃরড়হ ড়হ ঃযব জরমযঃং ড়ভ ওহফরমবহড়ঁং চবড়ঢ়ষবং) সমর্থন দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। কাজেই এই অবস্থায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের মাধ্যমে ‘আদিবাসী’ শব্দ টকশো কিংবা মিডিয়ায় ব্যবহার না করার নির্দেশনা প্রদান অবান্তর। আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের এই সংবিধান পরিপন্থী ও অপমানজনক পরিপত্র প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বহুত্ববাদের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের আদিবাসীদের মর্যাদাপূর্ণভাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবী জানাচ্ছি।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com