দেশে তৈরি উন্নতমানের কম্প্রেসর রপ্তানির মাধ্যমে তুরস্কে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করলো ওয়ালটন। নিজস্ব ব্র্যান্ড নামেই এসব কম্প্রেসর রপ্তানি করছে কোম্পানিটি। এরপর পর্যায়ক্রমে যাবে ওয়ালটনের রেফ্রিজারেটর, টিভিসহ অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্যও।
ইউরেশিয়া অঞ্চলের বিজনেস হাব হিসেবে খ্যাত তুরস্ক। সে দেশের খ্যাতনামা প্রযুক্তিপণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান কার্গি সগুতমা ইসিতমা স্যান. ভি টিক. লিমিটেড। তুরস্ক ও ইউরোপের অসংখ্য ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর পরিমান প্রযুক্তিপণ্য ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ weকরে তারা। আর তাই কম্প্রেসর সরবরাহের পাশাপাশি কার্গির সঙ্গে কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। ফলে তুরস্কসহ সমগ্র ইউরোপেই ওয়ালটন পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের সম্ভাবনাময় এক বিশাল দ্বার উম্মোচন হলো।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই, ২০২০) রাজধানীতে ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কে কম্প্রেসর রপ্তানির প্রথম শিপমেন্টের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সে সময় ওয়ালটন ও কার্গি’র মধ্যে ডিস্ট্রিবিউটরশিপ বিজনেস চুক্তি হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ওয়ালটনের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম এবং কার্গি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমিন কার্গি।
ভার্চুয়াল কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন, তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকি, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তফা ওসমান তুরান, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ, ওয়ালটন কম্প্রেসরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলী মীর মুজাহেদীন ইসলাম এবং ওয়ালটন কম্পিউটারের সিইও লিয়াকত আলী।
কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন ওয়ালটনের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফিরোজ আলম।
চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষ্যে আয়োজিত ভার্চুয়াল কনফারেন্স
ওয়ালটনকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমি ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করে দেখেছি তারা নানা উচ্চমানের পণ্য তৈরি করে। তবে কম্প্রেসরের মতো এতো উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য তৈরি এবং রপ্তানি করতে দেখে আমি অভিভূত। কম্প্রেসরের পাশাপাশি ওয়ালটন মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করছে। যা বাংলাদেশের জন্য মহৎ উদ্যেগ। ওয়ালটন সত্যিই এখাতে জায়ান্ট। আমি নিশ্চিত ওয়ালটন আরো এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে ইলেকট্রনিক্স এবং প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এশিয়ার ৮ম ও বিশ্বের ১৫তম কম্প্রেসর উৎপাদনকারি দেশ। দেশের একমাত্র কম্প্রেসর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। যার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৪ মিলিয়ন। ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদন সক্ষমতা ১০ মিলিয়নে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়ালটনের। শুরু থেকেই জার্মানভিত্তিক বিশ্বের একটি খ্যাতনামা কম্প্রেসর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ যন্ত্রাংশ নিচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, বাংলাদেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের কম্প্রেসর ইউরোপে রপ্তানি নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি সুখবর। দেশের রপ্তানি খাতের জন্যও একটি নতুন পণ্য। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে ওয়ালটন। তারা শুধু সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতেই সহায়তা করছে না; প্রচুর কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছে।
বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন বলেন, ওয়ালটন দেশেই এইচএফসিমুক্ত পরিবেশবান্ধব ফ্রিজ তৈরি করছে। শুধু তাই নয়; ওয়ালটন প্রমাণ করেছে- উন্নতমানের প্রযুক্তি পণ্য তৈরিতে বাংলাদেশের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। তুরস্কে কম্প্রেসর রপ্তানির ফলে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
কার্গির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমিন কার্গি বলেন, ওয়ালটন আমাদেরকে কম্প্রেসরের স্যাম্পল পাঠিয়েছিল। সেগুলোর উন্নত মান দেখে সন্তুষ্ট হই এবং ওয়ালটনের ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। ওয়ালটনের ডিস্ট্রিবিউটর হতে পেরে আনন্দিত। ওয়ালটনের সঙ্গে এই ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরো জোরদার এবং দীর্ঘমেয়াদি হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
কনফারেন্সের স্বাগত বক্তব্যে এডওয়ার্ড কিম বলেন, ওয়ালটনের টার্গেট- বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কম্প্রেসর রপ্তানিকারক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা। সেই যাত্রায় ইউরেশিয়া অঞ্চলের বিজনেস হাব ‘তুরস্ক’ যুক্ত হওয়া ওয়ালটনের জন্য এক বিশাল মাইলফলক। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, রাশিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলোতে ওয়ালটন পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ব্যাপকভাবে কাজ চলছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে রপ্তানি আদেশ পাচ্ছে ওয়ালটন।
ওয়ালটন কম্প্রেসরের সিইও প্রকৌশলী মীর মুজাহেদীন ইসলাম জানান, নিজস্ব কারখানায় জার্মান প্রযুক্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে ‘সাইলেন্ট ও ডিউর্যাবল’ কম্প্রেসর তৈরি হচ্ছে। কারখানায় রয়েছে মেটাল কাস্টিং ফাউন্ড্রি এবং গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ। আছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টেস্টিং যন্ত্রপাতি ও ল্যাব। বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নতুন আরেকটি সিরিজের কম্প্রেসর উৎপাদনে কাজ করছে ওয়ালটন। নতুন এই সিরিজটির উৎপাদন শুরুর পর রপ্তানির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
ওয়ালটনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ বলেন, বিশ্বের প্রায় ৩৫ টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটন পণ্য। ওয়ালটন পণ্যের ডিজাইন, উৎপাদন এবং বৈশ্বিক বিপণন নিয়ে কাজ করছেন ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা প্রকৌশলীরা। ফলে ওয়ালটনের ফ্রিজ, টিভিসহ বিভিন্ন পণ্য সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক টেস্টিং ল্যাব ‘এসজিএস’ (ঝএঝ) এর কাছ থেকে অর্জন করেছে সিই (ঈঊ), আরওএইচএস (জঙঐঝ), ইএমসি (ঊগঈ) ইত্যাদি সনদ। যেগুলো ইউরোপের বাজারে পণ্য রপ্তানির জন্য অত্যাবশক।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com