নরসিংদী জেলখায় হাজতীকে নির্যাতনের অভিযোগ

হাজী জাহিদ, নরসিংদী || ২০২২-০৭-২৪ ০৫:৩৮:২৪

image
নরসিংদীতে কারাবিধি অমান্য করে জেলা কারাগারে রাতের আধাঁরে লিজন মোল্লা (৩০) নামে এক হাজতিকে পিটিয়ে পুরুষাঙ্গ সহ পা ও কোমরের হাড় ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি মহলের প্ররোচনায় ও যোগ সাজসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নরসিংদী জেলা কারাগারের জেল সুপার শফিউল আলমের নেতৃত্বে এ কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওই হাজতির পরিবারের। পরবর্তীতে রাত গভীর হলে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন জেল সুপার শফিউল আলম ‘এর নেতৃত্বে কয়েকজন কারারক্ষি কারাবিধি অমান্য করে মুখে কালো কাপড় বেধে লিজনের কাছে যায় এবং তার দুই হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে মুখে কাপড় বেধে তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এসময় তার পুরুষাঙ্গে বার বার তারকাঁটা দিয়ে ফুটো করতে থাকে। এর ফলে তার পুরুষাঙ্গ ফুলে যায় এবং বেধরক পেটানোর ফলে বাম পা ও কোমড়ের একটি হাড় ভেঙ্গে যায়। যা তার পরিবারের সদস্যরা কাশিমপুর জেলখানায় দেখা করতে গিয়ে বিস্তারিত জানতে পারে। এদিকে বেধরক পেটানোর ফলে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়লে কারারক্ষিরা ওই সময়ের মারধর বন্ধ করে চলে যায়। সকালে দ্বিতীয় দফায় তাকে আবার পিটানো হয়। জেলখানায় লিজনকে পিটানোর খবর তার পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছলে তারা তাকে দেখতে জেলগেটে ছুটে যায়। সেখানে গেলে লিজনের সাথে তাদের দেখা করতে না দিয়ে জেলা প্রশাসকের নিষেধ আছে বলে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় লিজনের স্বজনদের একজন কারাগারে থাকা অন্য এক হাজতির সাথে দেখা করে জানতে পারে ১৮ জুলাই লিজনের ফেইসবুক আইডি থেকে তার কয়েকটি ছবি পোস্ট হয়।এতে করে কারাগারে লিজন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে সন্দেহ করে তাকে এভাবে পিটানো হয়। এদিকে ছেলের এ খবরে লিজনের মা সাজেদা বেগম বিভিন্ন মহলে ছুটাছুটি করতে থাকে। পরে গত ২০ জুলাই তিনি নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান সোহেলের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি টিম প্রথমে লিজনদের বাড়ীতে গিয়ে তার স্বজনদের সাথে কথা বলে। পরে নরসিংদী জেলা কারাগারে এসে জেল সুপারের স্বাক্ষাত চায়। এসময় ৪ জনের মধ্যে ২জনকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এদিকে কারা কর্তৃপক্ষের বেধড়ক পিটুনিতে লিজনের অবস্থা শংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এ অবস্থা বাহিরে জানাজানি হলে জেল সুপারের সমস্যা হতে পারে বিধায় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রতিনিধি টিম জেল গেটে যাওয়ার পূর্বেই তাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। অনুমতি পেয়ে নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান সোহেল ও সিনিয়র সহ সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন রাজু ভিতরে গিয়ে লিজনকে মারপিটের কথা জানতে চাইলে জেল সুপার শফিউল আলম মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ১৮ জুলাই তাকে আদালতে পাঠানো হলে আদালতের গারদখানায় মোবাইলের মাধ্যমে তার ফেইসবুকে ছবি পোস্ট দেয়। গারদখানায় লিজন ফেইসবুকে ছবি পোস্ট দিয়েছে এর কোন সি সি ফুটেজ আছে কিনা জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি ডিসি স্যার জানেন তাছাড়া প্রেস ক্লাবও বিষয়টি জানেন। বিষয়টা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাহলে জানেন বলে জেল সুপারকে পাল্টা প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি তারা নয় বরং নরসিংদী প্রেসক্লাবের কতিপয় একজন সদস্যের নাম বলেন। উপস্থিত সাংবাদিকরা ওই সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে জিজ্ঞেস করলে ‘সে জানলে প্রেসক্লাব কিভাবে জানলো’ তার দিকে এ প্রশ্ন ছুড়ে দিলে তিনি এর কোন উত্তর দিতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর তিনি বলেন, ১৮ তারিখ ৩ টার দিকে ওই সাংবাদিক আমার কাছে ফোন করে লিজন কোথায় আছে জানতে চান এবং যদি জেলখানায় থাকে তাহলে সে কিভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। জেলা কারাগার থেকে প্রতিনিধি টিম তাদের ক্লাব কার্যালয়ে গেলে লিজনের মা সহ বেশ কয়েকজন স্বজনকে ক্লাবে অপেক্ষারত অবস্থায় দেখতে পায়। এসময় ভিতরে ঢুকতে লিজনের মা সভাপতি কামরুল হাসান সোহেলকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেয়। অনেকটা বিলাপের সুরে তার ছেলেকে বাঁচানোর আকুতি জানান তিনি। লিজনের ছোট ভাই উপস্থিত সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড শুনায়। ওই কল রেকর্ডে জানা যায় লিজনকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ভ্যানে তাকে পাঠানো হয়েছে তাতে থাকা অবস্থায় ওই কল রেকর্ডটি। গাড়ীর আওয়াজে স্পট শুনা না গেলেও লিজনের উপর যে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তা বুঝতে কারোই ভুল হবেনা। সে বার বার তাকে বাচানোর জন্য আকুতি জানিয়েছে পরিবারের লোকদের কাছে। কল রেকর্ডটি শুনার পর জেল সুপারের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলে তিনি তা রিসিভ করেনি। পরে জেলার রিজিয়া বেগমকে ফোন করে লিজনকে কি কাশিমপুর পাঠানো হয়েছে এ কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন না আমরা পাঠানোর আদেশ কপি পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। এসময় মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডের কথা তাকে জানানো হলে তিনি বলেন, তাহলে আমি জেনে নেই বলে ফোনটি রেখে দেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি নিজে ফোন করে লিজনকে কাশিমপুর পাঠানো হয়েছে স্বীকার করেন এবং সেখানে তার কোন সমস্যা হবেনা বলে ও জানান তিনি। এদিকে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) কাশিমপুর কারাগারের গিয়ে লিজনের সাথে স্বাক্ষাত করে তার স্বজনরা। তাকে দেখে সবাই হতচকিত হয়ে যান। দুইজন কারারক্ষীর শরীরে ভর দিয়ে কোমরে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে কোন রকমে দাঁড়িয়ে সে দেখা করতে আসে। বাম পা ভাঙ্গা, কোমরের একটি হাড় ভাঙ্গা সারা শরীরে মারের ছোপ ছোপ দাগ। এসময় লিজন তার স্বজনদের শুধু বিলাপ করে বলে যাচ্ছিল ‘ভাই আমি আর বাঁচতাম না, আমারে হেরা মাইর‍্যা শেষ কইরা ফালাইছে।’ লিজনের মা সাজেদা বেগম বলেন, জেল সুপার বাদী পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের প্ররোচনায় আমার ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য রাতের আধারে কারাবিধি অমান্য করে লিজনের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। আজ আমার ছেলের জীবন শংকটাপন্ন। এ অবস্থায় তার সুচিকিৎসার জন্য আমি আদালতের কাছে জোড় দাবী জানাচ্ছি’। লিজনকে কাশিমপুর পাঠানোর কারণ জানতে নরসিংদী জেলা কারাগারের জেল সুপার শফিউল আলমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, হেড অফিসের নির্দেশে তাকে কাশিমপুর পাঠানো হয়েছে। তবে তাকে কোন ধরনে মারধোর করা হয়নি বলে জেল সুপার দাবি করেন।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com