দেশের প্রথম ছয় লেন সেতুর উদ্বোধন সেপ্টেম্বরে

নিজস্ব প্রতিবেদক: || ২০২২-০৭-১৪ ০২:১০:৪৫

image

কাশিয়ানী উপজেলার মধুমতি নদীর ওপর নির্মাণাধীন কালনা সেতু সেপ্টেম্বর মাসে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন এ যোগাযোগ অবকাঠামোটিই দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু।

সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এর এক প্রান্তে (পূর্ব) গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা আর পশ্চিমে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা। বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হচ্ছে। জাপানের টেককেন কর্পোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।

এ সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পর্যটন, শিল্প ও বাণিজ্য প্রসারে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা স্থানীয়দের। এছাড়া, এটি বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ত্বরান্বিত হবে। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারিত হবে। পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বাঁচবে।

সওজ ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ সেতু চালু হলে নড়াইল, যশোর, বেনাপোল স্থলবন্দর ও খুলনা থেকে ঢাকাগামী যানবাহন মাগুরা-ফরিদপুর না ঘুরে কালনা হয়ে যাতায়াত করতে পারবে।

এতে বেনাপোল-ঢাকা ও যশোর-ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমে আসবে। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া ও মোংলা বন্দর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেরঅন্য জেলার দূরত্বও কমে যাবে।

কাজের অগ্রগতি

ADVERTISEMENT
dt-ad

সেতুটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, এ সেতুর সার্বিক কাজ হয়েছে ৯৫%। সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর দুটি স্প্যান বসানোর কাজও শেষ। সওজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্প্রতি কাজ পরিদর্শন করেন। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরে সেতু চালুর লক্ষ্যে কাজ চলছে।

এ সেতুতে দীর্ঘদিন ধরে উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন সওজের প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন।

তিনি জানান, দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু এটি। পদ্মা সেতু চার লেনের। দেশের সবচেয়ে বড় নেলসন লোসআর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু, যা হবে দৃষ্টিনন্দন। পদ্মা সেতুর পাইলক্যাপ পানির ওপর পর্যন্ত। কিন্তু এ সেতুর পাইলক্যাপ পানির নিচে মাটির ভেতরে। তাই নৌযান চলাচলে সমস্যা হবে না,পলি জমবে না এবং নদীর স্রোত কম বাধাগ্রস্ত হবে।

সেতু এলাকায় ঘুরে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,নদীর পূর্ব পাড়ের সংযোগ সড়কের কার্পেটিং শেষ হয়েছে। পশ্চিম পাড়ে কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। সংযোগ সড়কের ১৩টি কালভার্টের মধ্যে ১২টির কাজ শেষ। অন্যটিরও শেষ পর্যায়ে। আটটি আন্ডারপাসের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী অংশে সেতুর ডিজিটাল টোলপ্লাজা নির্মাণের কাজ শেষের পথে। সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোসআর্চ টাইপের এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। তৈরি করেছে জাপানের নিপ্পন কোম্পানি। এটিই ছিল সেতুর সবচেয়ে বড় কাজ, তা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর অন্য স্প্যানগুলো পিসিগার্ডারের (কনক্রিট)।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতি এবং দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭.১০ মিটার। বর্ষায় পানি থেকে সেতুর উচ্চতা ৭.৬২ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক হবে ৪.২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০.৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯.৮৫ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি সই হয়। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন থেকে ৩৬ মাস অর্থাৎ ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ছিল কাজের মেয়াদকাল।

এ বিষয়ে সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আশরাফুজ্জামান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “প্রথমে সেতুর নকশা ছিল চার লেনের, পরে তা করা হয়েছে ছয় লেন। সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণে দেরি হয়েছে। কোভিডের কারণে প্রায় ছয় মাস কাজ বন্ধ ছিল। এসব কারণে নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হয়নি। ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় দেশে ১৭টি সেতুর কাজ চলছে। সবগুলো শেষ করতে মূল প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।”

ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব

কাশিয়ানী উপজেলা সদরের বাসিন্দা শিক্ষক মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই সেতু চালু হলে উভয়পারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। এটিকে কেন্দ্র করে মধুমতী নদীর চরগুলোতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। এই সেতুকে ঘিরে কাশিয়ানীতে কলকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া ও হিরণ্যকান্দিতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলসহ ১০ জেলার মানুষ পদ্মা সেতু চালু হলেও পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না। কালনা সেতু চালু হলে ওই জেলাগুলো উপকৃত হবে। ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য প্রসার লাভ করবে।”

তবে কালনা থেকে যাশোর পর্যন্ত সড়কটি কম চওড়া। কালনা সেতু চালু হলে ওই সড়ক গাড়ির চাপ সামলানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

এ প্রসঙ্গে সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, “আপাতত সড়কের চাপ সামলাতে কালনা থেকে যশোর পর্যন্ত বর্তমান সড়কটি আরও ৬ ফুট চওড়াকরণ কাজের টেন্ডার শেষ হয়েছে। দ্রুত এ কাজ শুরু হচ্ছে। এছাড়া সড়কটি ছয় লেন করার প্রকল্পও রয়েছে।”

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com