সীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ডে নিহত কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুরের দাফন ভোলায় সম্পন্ন

মোঃ জহিরুল হক, ভোলা || ২০২২-০৬-০৭ ১৪:৩৮:৫৮

image
সীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ডে নিহত কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুরের লাশ সোমবার সকাল ৯ টায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে তার গ্রামের বাড়ী ভোলায়। তার বাড়িতে এখনও চলছে শোকের মাতম। তার মায়ের সাথে মৃত্যুর পূর্বে সকালেও ফোনে কথা কইছি হাবিবের সাথে। হাবিব জিগাইছে মাগো কি খাইছো নাস্তা করছো, কি করো? আমি কইছি বাবা আমি নাস্তা করছি আর আমার মাইয়ারে পড়াইতে লইছি। তহন হাবিব কইলো ওরে মাইরো না মা ওরে আমি ডাক্তারি পড়ামু। ওর জন্য একটু কষ্ট করো তোমার ওরে নিয়া চিন্তা করা লাগবে না। এভাবেই অশ্রুচোখে ও বুকফাটা আহাজারির সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকু-ে বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকা-ে নিহত কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান (২৫) মা হোসনে আরা বেগম। হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘কাইল দুপুরেও আমার সঙ্গে ঘণ্টা খানেক কথা হইছে। তখন কইছে মাগো আমি বাড়িতে আমু। বেতন পাইলে বাড়িত আমু, আমারে চার দিনের ছুটি দিছে। দুই দিন আইতে যাইতে যাইবো আর দুই দিন তোমাগো লগে থাকমু। আর তো কিছু কইলো না গো বাবায়। এই ছিল আমার বাবার সঙ্গে শেষ কথা আর আমার বাবার মুখের কথা শুনতে পারলাম না। নিহত হাবিবুর রহমান ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ বালিয়া বটতলা গ্রামের হরাজি বাড়ির মো. সিদ্দিক বেপারির মেয়ের ঘরের নাতি। হাবিবুরের বাবা শাহাবুদ্দিন পটুয়াখালীর বাসিন্দা ছিলেন। ছোট বেলায় বাবা শাহাবুদ্দিনের মৃত্যু পর মায়ের সঙ্গে থাকতেন ভোলার দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের নানার বাড়িতে। মামা আলমগীরের সঙ্গে দীর্ঘ ৭ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান চট্টগ্রামে। চাকরি মিলে সীতাকু-ের বিএম কন্টেইনার ডিপোর কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে। প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতেও ডিপোতে নাইট ডিউটি পালন করছিলেন হাবিবুর রহমান। ওই রাতেই ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্য সকলের সঙ্গে প্রাণ যায় হাবিবুর রহমান। হাবিবুর ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। এ মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের পরিবারের আয়ের চাকা। হাবিবুরের মা হোসনে আরা বেগম আরও বলেন, ‘আমার বাবায় ডেলি দুই তিনবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা কইতো। বাবায় এক সপ্তাহ দিনে ডিউটি করতো এক সপ্তাহ রাইতে ডিউটি করতো। সাত মাস আগে আমার বনাই (বোনের জামাই) মারা যাওয়ার সময় হাবিবুর বাড়িতে আইছিল। রোজার ঈদে বাড়ি আশার কথা ছিল, ছুটি পায় নাই তাই আসতে পারে নাই। হাবিবুরই আমাদের এক মাত্র উপার্জনের উৎস ছিল, আল্লাহ ওরে কাইরা নিয়া গেলো এখন আমাদের কি হবে? একই রকম অশ্রু চোখে হাবিবুরে নানা মো. সিদ্দিক বেপারি বলেন, হাবিব ছোট থাকতেই তার বাবা মারা গেছেন। আমরা ছোটবেলা থেকে লালন পালন করে এই সাত বছর হইছে সীতাকু-ে বিএম ডিপোতে কাজ করছে। গতকাল মাগরিবের সময় হাবিবুরের সঙ্গে কথা হইছে। তখন সে বললো নানা আমার রাত ৮ থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত ডিউটি এই সময় ফোন দিয়েন না। কথা বলার পরে আর আমরা কিছু জানি না। রবিবার সকালে এই খবর পেয়ে আমার ছেলেরে ফোন দিলে সে জানায় শনিবার রাতে ডিপোতে বিস্ফোরণ হয়েছে তাতে অনেক মানুষ মারা গেছে। তখন হাবিবুরের কথা জিগ্যেস করলে বলেন হাবিবুরও মারা গেছে, আমরা হাবিবুরের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরছি। এই হাবিবুর আমার স্বামী মরা মেয়ে ও বাপ মরা নাতিনের মুখে খাবার যোগাতো। এখন আমার মেয়ে ও নাতিনেরে কে দেখবো..? হাবিবুরের মামা মো. আলমগীরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের মর্গ থেকে হাবিবুরের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তাদের কাছে হস্তান্তরেরর পর হাবিবুরের বন্ধুরাসহ মরদেহ নিয়ে গতকাল রাতের মধ্যে ভোলায় পৌঁছায়। হাবিবুরের লাশ সোমবার সকাল ৯ টায় জানাজা নামাজ শেষে তার গ্রামরর বাড়িতে দাফন করা হয়।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com