রূপগঞ্জে পরিবহন সেক্টরে বেপরোয়া চাঁদাবাজি মাসে আয় অর্ধকোটি টাকা

সাইফুল ইসলাম, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) || ২০২২-০৫-১১ ০৯:২৬:১৩

image
চাদা দিলে গাড়ির চাকা ঘুরবে, না দিলে ঘুরবে না। এটিই যেন শিল্পাঞ্চলখ্যাত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পরিবহন সেক্টরের অঘোষিত আইন। উপজেলার পরিবহন সেক্টরের শতাধীক স্পট থেকে বেপরোয়া চঁাদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকমর্ীদের থেকে শুরু করে প্রশাসন ও প্রভাবশালীরা এসব চঁাদাবাজির কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে অভিযোগ রয়েছে। ভুলতা ফাড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান ও ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ওমর ফারুকসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও এ চঁাদাবাজির টাকা থেকে ভাগ পান বলে অভিযোগ পরিবহণ শ্রমিকদের। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, বাস, ট্রাক, অটোরিকসা, সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে নিয়এিসব চঁাদা আদায় করা হচ্ছে। পরিবহন চালকরা বাধ্য হয়েই এসব চঁাদার টাকা দিয়ে চলতে হচ্ছে। চঁাদার টাকা না দিলেই সড়ক গুলোতে পরিবহন চালাতে দিচ্ছেনা ওইসব চঁাদাবাজরা। এক প্রকার চঁাদাবাজদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে পুরো পরিবহন সেক্টর। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চঁাদা আদায় করা হচ্ছে। পরিবহন স্টেশন গুলোতে গাড়ি ভর্তি করতে হলে মোটা অংকের একটি অংশ জামানত বা হাদিয়া হিসেবে আদায় করা হয়। পরে প্রতিদিন একবার চঁাদা ও মাসে একবার চঁাদা আদায় করা হচ্ছে। সে হিসেবে রূপগঞ্জ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আদায় আয় হচ্ছে। আর এসব চঁাদার টাকা ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার কাছে জমা হয়। আর এ চঁাদার টাকা হাইওয়ে পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন স্থানে ভাগ ভাটোয়ারা করে দেয়া হয়। বেপরোয়া চঁাদাবাজিতে ক্ষুব্দ পরিবহন মালিক ও চালকরা। অনেক সময় চঁাদা তোলা এবং চঁাদার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। র‍্যাব বেশকয়েকবার অভিযান চালিয়ে বেশকিছু পরিবহন চঁাদাবাজকে গ্রেপ্তার করলেও রাঘববোয়াল রয়ে যায় ধরাছোয়ার বাইরে। সুত্র জানায়, ভুলতা-মুড়াপাড়া সড়কে সিএনজি ষ্টেশন নিয়ন্ত্রন করেন হাজ্বী মনির হোসেন। তিনি প্রতিদিন ১’শ সিএনজি থেকে ২০ টাকা করে চঁাদা উঠান। সে হিসেবে মাসে আয় ৬০ হাজার। অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ নেতা রাশেদ। প্রায় ২০০ টি অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চঁাদা নেয়া হয়। সে হিসেবে মাসে আয় ৩ লাখ টাকা। এছাড়া ভুলতা-মুড়াপাড়া সড়কে ভাড়ি যানবাহন থেকে আদায় করা হচ্ছে ১,শ থেকে ৩’শ টাকা পর্যন্ত। এ খাতে মাসে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা চঁাদা আদায় করা হয়। সাওঘাট সিএনজি ষ্টেশনের ৬০টি সিএনজি নিয়ন্ত্রন করেন শ্রমিকলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন। প্রতিদিন ৩০ টাকা করে মাসে ৫৪ হাজার টাকা চঁাদা উঠানো হয়। অটোরিকশা নিয়ন্ত্রন করেন ছাত্রলীগ কমর্ী মহিউদ্দিন ও রাজু নামের দুই জন। প্রায় ৫০টি অটো রিকশা থেকে মাসে চঁাদা আদায় করেন ৭৫ হাজার টাকা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইয়ে (বাইপাস) সড়কের গোলাকান্দাইল এলাকার সিএনজি, টেক্সি ও লেগুনা নিয়ন্ত্রন করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ। এ খাতে সিএনজি থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার, প্রাইভেটকার থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার ও লেগুনা থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা আয় হয়। ভুলতা থেকে তারাব কঁাচপুর লেগুনা নিয়ন্ত্রণ করেন শ্রমিকলীগ নেতা রতন। তিনি প্রায় ৭০টি লেগুনা থেকে মাসে ৬৩ হাজার টাকা চঁাদা উঠান। ভুলতা-আমলাব সড়কে ১৩৫টি অটোরিকশা চলে। আর এ অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে চঁাদা তুলেন যুবলীগ নেতা জাহেদ মিয়া। সে হিসেবে মাসে প্রায় ২ লাখ ২৫০০০ টাকা আয় হয়। এছাড়া ভুলতা এলাকার দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিবহন থেকে চঁাদা আদায় নিয়ন্ত্রন করেন বলাইখা এলাকার সোহেল, ফোরকান ও কাউসার নামের তিন জন। হাটাব-ভুলতা সিএনজি নিয়ন্ত্রণ করেন কামরুল। সেখানে ৭০টি সিএনজি থেকে ২০ টাকা করে চঁাদা আদায় করা হচ্ছে। রূপসী বাস স্টেশন থেকে মুড়াপাড়া চলাচল করে প্রায় ৩ শতাধিক ইজিবাইক ও অটোরিক্সা। প্রতিটি গাড়ি থেকে প্রতিদিন আদায় হয় ২০ টাকা করে। সেই হিসেবে এই স্ট্যান্ড থেকে চঁাদা আদায় হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রূপসী স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন মাহবুব ভুইয়া নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। রূপসী-তালতলা-নুরুল হক মার্কেট-গঙ্গানগড় এলাকা পর্যন্ত রাস্তার পার্শে থাকা প্রতিদিন প্রায় ২৫০ ট্রাক থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। সে হিসেবে মাসে এখান থেকে আয় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা চঁাদা উঠানো হচ্ছে। আর এ চঁাদার টাকা উঠাচ্ছেন শ্যামল চন্দ্র দাস ও মাসুদ ভুইয়া নামের দুই জন। বিশ্বরোড ট্রাক ষ্টেষন নিয়ন্ত্রন করেন মাহাবুবুর নামের স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক নেতা। বাস নিয়ন্ত্রণ করেন মোহাম্মদ আলী নামের আরেক পরিবহন শ্রমিকলীগ নেতা। বরপা এলাকার ২৫০টি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রন করেন যুবলীগ কমর্ী ইয়ামিন ভুইয়া ও লিটন মিয়া। এ খাতে তারা মাসে চঁাদা তুলেন প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বরপা-যাত্রাবাড়ি ৪৫টি লেগুনা নিয়ন্ত্রণ করেন ছাত্রলীগ নেতা অ্যানি ভুইয়ার সহযোগী যুবলীগ কমর্ী জাহাঙ্গীর মিয়া। এখান থেকে মাসে আয় ৬৭ হাজার টাকা। বরপা-শান্তি নগড় অটোরিকশা নিয়ন্ত্রন করেন যুবলীগ কমর্ী শওকত সাউদ। মাসে আয় ৩৬ হাজার। বরপা-যাত্রাবাড়ী গ্রীন বাংলা মিনিবাস নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামীলীগ নেতা মনজুর হোসেন। এছাড়া পিএসআরএম ও এএসবিআরএম নামের দুটি রড মিলের সামনে থাকা প্রায় ১৫০টি ট্রাক থেকে চঁাদা তুলেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আব্দুল গাফ্ফার রাসেল, লিথেন ভুইয়া। এ খাতে মাসে আয় প্রায় সোয়া দুই লাখ টাকা। চনপাড়া-স্টাফ কোয়াটার সিএনজি ষ্টেশন নিয়ন্ত্রণ করেন কালু, মিঠু ও মুনসুর নামের তিন জন। এ খাতে মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয়। রূপগঞ্জ থানা সংলগ্ন ষ্টেশনে সিএনজি ও অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করেন তোফাজ্জল ও কাশেম। এ খাতে প্রায় লাখ টাকা আয় হয়। তারাব বাজার এলাকায় সব ধরনের পরিবহন থেকে চঁাদার নিয়ন্ত্রণ করেন মিরাজ নামের এক ব্যক্তি। তবে, এ টাকা পৌরসভার নামে উঠানো হয় বলে স্থানীয়রা জানান। বিশ্বরোড ট্রাক ষ্টেশন নিয়ন্ত্রন করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ বেশ কয়েকজন নেতা। প্রায় ২’শ ট্রাক থেকে ১’শ থেকে ১৫০ টাকা আদায় করা হয়। সে হিসেবে এখান থেকে মাসে আয় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। বরাব ষ্টেশনে অটোরিকশা ও সিএনজি নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামীলীগ নেতা মোলজার হোসেন রতন। এ খাতে মাসে প্রায় দেড় লক্ষাধীক টাকা আয় হয়। আতলাপুর বাজার-ছনপাড়া ৭০টি সিএনজি নিয়ন্ত্রণ করেন আতলাপুরের ইউসুফ। মাসে চঁাদা তুলেন প্রায় ৪০ হাজার টাকা। রানীপুরা, করাটিয়া, ছনপাড়া সড়কে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করেন ছাত্রলীগ নেতা আইবুর রহমান। মুড়াপাড়া বাজার সিএনজি ও অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করেন কামাল হোসেন ও খায়েন। গোলাকান্দাইল নতুন বাজার এলাকায় ১৫০টি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ নেতা নুর আলম ও আমিন ভেন্ডারি। এখান থেকে মাসে প্রায় দেড় লক্ষাধীক টাকা চঁাদা তোলা হয়। এছাড়াও ইছাপুড়া, ব্রাক্ষণখালী, দাউদপুর, জিন্দাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় শতাধীক স্পটে এ ধরনের চঁাদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। সিএনজি ও অটোরিকশা চালকরা অভিযোগ করে জানান, রূপগঞ্জ একটি শিল্প এলাকা। এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কাজ কর্ম করে সংসার চালাচ্ছেন সাধারন মানুষ। আর শত শত পরিবার সিএনজি ও অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে মানুষ। তবে, ষ্টেশন গুলোতে সিএনজি বা অটোরিকশা ভর্তি করতে গেলেই ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। এছাড়া টাকা না দিলে রাস্তায় গাড়ি চলতে দিচ্ছেনা চঁাদাবাজরা। বাধ্য হয়ে চঁাদার টাকা দিয়েই চালাতে হচ্ছে। গাড়ি না চালালেও চঁাদার টাকা বাধ্যতামুলক দিতে হবে। এ ব্যাপারে কথা কয়েকজন পরিবহণ শ্রমিকের সঙ্গে তারা বলেন, আমরা কষ্ট করে চালাই। আর নেতাকর্মীদের প্রতিদিন চঁাদা দিতে হয়। তাদের চঁাদা না দিলে তারা রাস্তায় গাড়ি চালাতে দেয় না। চঁাদা দিতে হয় এ কারণে যাত্রীদের কাছ থেকেও ভাড়া বেশি নিতে হয় আমাদের। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভূইয়া বলেন, আওয়ামীলীগের দলীয় নাম ভাঙ্গিয়ে অনেকে চঁাদাবাজি করতে পারে বলে ধারণা করছি। তবে যদি দলীয় কেউ চঁাদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কাচঁপুর হাইওয়ের পুলিশের ওসি নবীর হোসেন বলেন, হাইওয়ে পুলিশের কেউ চঁাদাবাজি থেকে কোন ভাগ পান না। যদি প্রমাণ পাওয়া যায় কেউ চঁাদাবাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com