শতভাগ বিদ্যুৎ এর ঘোষনায়ও লোডশেডিং এ অতিষ্ঠ পলাশবাসী
হাজী জাহিদ, নরসিংদী ||
২০২২-০৪-২৭ ০৫:২৬:৪০
উপজেলা শতভাগ বিদ্যুৎতায়িত হওয়ার পরও ক্রমশ বেড়েই চলেছে লোডশেডিং। আর এতেই তীব্র লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা উপজেলা। দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় থমকে যাচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক কাজ-কর্ম। ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে তীব্র লোডশেডিংয়ে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনজীবন। ইফতার, সাহরি এবং তারাবির নামাজের সময়েও অনেক এলাকায় থাকছে না বিদ্যুৎ। যদিও ঘোড়াশাল পল্লী বিদ্যুৎ আঞ্চলিক অফিস বলছে, পলাশ তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের গ্রিড থেকে আমাদের চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছি। পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। টানা কায়েকদিনের লোডশেডিংয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর, দোকান, মার্কেট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকাসহ অপর ৪টি ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। আর মাত্র কিছুদিন পর পবিত্র ইদুল ফিতর। মুসলিমদের এই গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়লেও বিদ্যুতের সংকটে তা এক রকম অচল হয়ে পড়েছে। ফলে প্রচন্ড গরমের মধ্যে ক্রেতাদের মার্কেটগুলোতে আসতে হচ্ছে। একই কারণে উপজেলার বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ফটোস্ট্যাট-কম্পিউটারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে ২-৩ ঘন্টার আগে ফিরে আসার কোনো লক্ষণ নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কবলে উপজেলার প্রায় ৪৫ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ঘোড়াশাল বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী মুন্না, সিরাজুল, বাবুলসহ একাধিক দোকানিরা ও মানবধিকার সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, সামনে পবিত্র ইদুল ফিতর। কিন্তু ঘন ঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য একবারে লাটে উঠছে। পলাশ নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না। অভিযোগ জানানোর জন্য বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের যেসব নাম্বার দেওয়া আছে, সেগুলো এখন বন্দ থাকে, খোলা থাকলেও কল দিলে কেউ রিসিভ করে না। উপজেলার বালুচর পাড়ার বাসিন্দা মুনসুর মিয়া এবং গজারিয়ার সাধুর বাজারের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, আমাদের এলাকায় আগে কখনো বিদ্যুতের এমন লোডশেডিং হয়নি। ইদানিং দিনে রাতে প্রায় ৪/৫ ঘন্টার অধিক সময় বিদ্যুৎ তাকে না। বিদ্যুৎতের এমন লোডশেডিং দেখে মনে হয় যে কোন অজোপাড়া গাঁয়ে বসবাস করছি। উপজেলার গড়পাড়া গ্রামের বিসমিল্লাহ এম্বোটারির মালিক জাহিদ মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে আমার কারখানার মেশিনগুলো অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে। এতে করে কারখানার কাপড় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। নতুন বাজার এলাকার ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী ইব্রাহীম মিয়া জানান, ওয়ার্কসপের কাজগুলো পুরোপুরি বিদ্যুৎতের ওপর নির্ভরশীল। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎতের অপেক্ষায় থাকতে হয়। গত এক মাস ধরে এ অবস্থা চলছে।
গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক হারে লোডশেডিং দেখা দিচ্ছে। এত ক্ষতির মুখে পড়েছে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের পোলট্রি শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্পকারখানার মালিকরা। এসব বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নরসিংদী-১ ঘোড়াশাল আঞ্চলিক অফিসের ডিজিএম মোঃ আকবর হোসেন জানান, শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের অংশ হিসেবে পলাশ উপজেলায় ১১৮টি গ্রামের মোট ৪৫ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অধিক লোডশেডিংয়ের কতা স্বীকার করে ডিজিএম বলেন, গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের গ্রিড থেকে আমরা অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছি। আগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার থেকে ৬৩ মেগাওয়াট করে ১২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতাম। কিন্তু গত কিছুদিন পূর্বে ৬৩ মেগাওয়াটের একটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যায়। আর তাই আমরা অর্ধেক বিদ্যুৎ দিয়ে কোনো মতে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, নতুন আকেটি ৭৫ মেগাওয়াটের পাওয়ার ট্রান্সফরমার সবানোর ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গেছে; এখন সেই সুবিধা পেতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগতে পারে। ঈদের ছুটির সময় সরকারি বেসরকারী অফিস, কলকারখানা ও বিভিন্ন স্থাপনা বন্ধ থাকায় নতুন ট্রান্সফরমার না পেলেও লোডশেডিং থাকবে না। আর আমরা যদি দ্রুত সময়ে নতুন ট্রান্সফরমার পাই তাহলে বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার ঠিক হয়ে যাবে।
এব্যাপারে ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র আল-মুজাহিদ হোসেন তুষার, পলাশ উপজেলা নিরবাহী কর্মকর্তা ফারহানা আফসানা চৌধুরী, পলাশ থানা ভার প্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস এবং সমস্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পৌরসভার কাউনসিলর সহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্ত বর্গ সাংবাদিক পল্লী বিদ্যুৎ এর জিম, এজিম সহ আজ সকালে বিদ্যুৎ কিভাবে সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনা করা যায় এ নিয়ে আলোচনা সভা বসে। কারন বিদ্যুৎ ঠিক মত পাওয়ার জন্য আজ পলাশের জনগনের বাদ যোহর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করার কথা ছিল বিধায় কর্তৃপক্ষের টনক নরে উঠে আলোচনা সভা বসে। আলোচনায় দ্রুত বিদ্যুৎতের সমস্যা সমাধান করার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রধান করেন।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357