আগত ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ত, এখন পাকা ঘরে ঘুমাচ্ছি

সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর || ২০২২-০৪-২৫ ০৯:৪৪:১৬

image
ছোট বেলায় যখন বাবার বাড়ীতে চিনু (ছিলাম) তখনও ঘরের চাল দিয়া দর দর করিয়া পানি পড়িছিল । অনেক কষ্ট করিয়া বাবা মোক বিছা খাইছিল ( বিয়ে দিয়েছে )স্বামীর বাড়ী আসিয়া দেখা পাইচু অন্যের ভিটাত প্লাস্টিকের পলিথিন দিয়া চাল বৃষ্টির পানি ঘরে পড়িত আর রোদ উঠিলে প্লাষ্টিকের ঘরে থাকা যেত না । এনকরিয়া ১৮ বছর পার করিছু । এর ভিতর তিন মেয়ে বাবা মা হয়েছি হামরা (আমরা ) বাড়ির ভিটা নাই ঘর করিম ক্যানকরিয়া চিন্তায় কপাল খান ভাজ হইছে এমন কথাগুলো বলেছেন দিনাজপুর সদরের সুন্দরবন ইউনিয়নের রানিপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের দম্পতি সায়েন্তী রানী ও সদারু রায় । আজ সোমবার সকালে স্বরেজমিন ঘুরে দেখা তাদেও সাথে আরোও কথা জানা গেছে সদারু রায় আরোও বলেন খাবারের জন্য মানুষের বাড়ীতে সারাদিন খাটিয়া ভাত খাবার খাইছু । কোনদিন কল্পনাও করি নাই এরকম একটা পাকা ঘর পাম (পাব) এখন অটোরিকশা চালিয়ে পরিবার ভালভাবে চালাচ্ছি । তিন মেয়ে লেখা করছে । বড় মেয়ের এবছর বিয়ে দিব । মেঝো মেয়ে সীমা রানী ষষ্ঠ শ্রেণেিত পড়ছে , ছোট মেয়ে লীমা রানী চতুর্থ শেণীতে লেখাপড়া করছে । এই আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাস করছে তারামনি রানী (৫৯) তিনি বলেন একটা সুন্দর পাকা ঘর পাইছো হামার পাড়ার পয়ত্রিশটি পরিবার একত্রে থাকি। এখানে আমরা সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী । হামার এখানে ল²ী পূজার মন্দির আছে , সবাই মিলে চাদা দিয়ে আমরা পূজা করি । একটা দুর্গামন্ডব হলে আরোও ভালো হইবে। সবাই মিলিয়া পূজা করিবার পারিব । তারামনি রানী আরোও বলেন এক ছেলে ধীরেন রায় সিলেটে রিক্সা চালায় বৌমা (ছেলে স্ত্রী ) ঢাকায় গার্মেন্টসে থাকে । তাদের ঘর ২ মেয়ে আছে তারা আমার সাথে এই আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাস করে । তারা লেখাপড়া করছে তাদের বিয়ে-শাদী দিতে হবে । সামনের বছর সেজন্য অনেক টাকা লাগবে । আর এখন থাকিবার চিন্তা নাই পাকা ঘর আছে । এই আশ্রয়ান প্রকল্পে রানিপুকুরে নিজ নিজ নামে বরাদ্দ করা হয়েছে সকলেই ইতিমধ্যে ঘরে উঠেছে । আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় ধাপের ঘরগুলো উদ্বোধন করবেন ইতিমধ্যেই তারা তাদের সবাই ঘরে উঠেছে এবং নিজেদেও মনের মতো করে সংসার সাজিয়েছেন । বিদ্যুতের লাইন হয়েছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা হয়েছে । এখানে সবাই কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে । এখানকার কেউ অটোরিকশা চালায়, কেউ কৃষিকাজ করে, কেউ দিনমজুরের কাজ কওে, তবে রাতে সবাই একসাথে পাশাপাশি ঘরে ঘুমাতে পারে। তাদের মধ্যে নেই কোন ভেদাভেদ। প্রতিটি হিন্দু বাড়ীতে রয়েছে পূজা করার তুলসীর গাছ এবং সেই তুলসীর গাছটি চারপাশে সুন্দর করে সাজানো যেখানে পানি দেয়। প্রতিদিন পুজো করে । আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকেন অরিবালা রানী (৫৫) তার এক ছেলে মানিক রায় । তার ছেলের নামে একটি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। তারা আগে অন্যোর জমিতে বসবাস করলেও এখন দুই শতক জায়গা তার নামে এবং তার ছেলের নামেও ২ শতক জমি বরাদ্দ সহ ঘর তৈরি করে দিয়েছেন সরকার। পাশাপাশি দুটি ঘর সুন্দর করে সাজানো চারদিকে পরিপাটি করা হয়েছে। বাড়ীর বাহিরে রয়েছে টিবওয়েল। নিজেদের পরিবারটি নিজের মতো করে সাজিয়েছে বউমা ( ছেলের স্ত্রী) ফেলানী রানীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন ২০ বছর হয়েছে আমার এই বাড়ীতে বউ হয়ে আসা। যখন আমি এসেছিলাম তখনও আমার শ্বশুর-শাশুড়ীর ঘর ছিল না। একটি টং এর ভিতর আমি আর আমার স্বামী থাকতাম অপর একটি ঘরে আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী বসবাস করত । বৃষ্টি আসলে ঘওে থাকা যেত না । আর প্রচন্ড রোদের ভিতর আর ঘরে থাকা যেত না। দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সরকার আমাদেরকে একটি করে ঘর বরাদ্দ করেছে সুন্দর ঘরে এখন আমরা থাকতে পারছি পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক সুখে আছি । বাড়ীর পাশের ছোট্ট একটি দোকান রয়েছে। মুদিখানা দোকান। আমাদের মুদিখানার দোকান আমরাই চালাই চা–বিস্কুট বিক্রি করি । আমাদের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারাই হলো এই দোকানের গ্রাহক । তাদের কাছে বিক্রি হয় দোকানের লাভ হয় । তা দিয়ে আমরা আমাদের সংসার ভাল ভাবেই কেটে যাচ্ছে। পাশাপাশি আমরা কৃষি কাজ ও করি। মাঝেমধ্যে অন্যের বাড়ীতে দিনমজুরের কাজ করি । তবে এখনো আমাদের বেশকিছু সচ্ছলতা ফিরে এসেছে । বাড়ীর চিন্তা নেই রাত শেষে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি । ঘরে বিদ্যুতের আলো রয়েছে। বাতাসের জন্য ফ্যান আছে । সব মিলিয়ে অনেক ভালো আছি । আমাদের এখানে একটি সরকারী পুকুর রয়েছে শুনেছি এই পুকুরটি আমাদেরকে এই আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের এর জন্য লিজ দেওয়া হবে । এই পুকুরটিতে আমরা সমবায়ের ভিত্তিতে এখানে মাছ চাষ করব । বিক্রির জন্য না হলেও নিজেদের মাছ খাওয়াা- জন্য হবে । আশ্রয়ণ প্রকল্পের পঞ্চায়েত প্রধান মঙ্গলু রায় (৬৫) বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের খাস জমির জন্য আমরা এর আগেও বেশ কয়েকবার মামলা-মোকদ্দমা হয়েছিল। আমি জেল খেটে ছিলাম আজ সেই সরকারি খাস জায়গা আমাদের স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য সরকারিভাবে ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। সুন্দর সুন্দর ঘর তৈরি করে দিয়েছেন সরকার। ঘরের উপরে লাল টিন আর বিল্ডিং ঘর। অনেক দুর থেকে সুন্দর দেখায়। আমরা একে অপরের সাথে মিলেমিশে এই আশ্রয়ন প্রকল্পে পঁয়ত্রিশটি পরিবার বসবাস করি। অধিকাংশ পরিবারের হিন্দু তবে তিনটি পরিবার আদিবাসী রয়েছে তারাও হিন্দুধর্মাবলম্বী কর্মকান্ড পরিচালিত করে। তাই আমরা একে অপরের আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি ।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com