রূপগঞ্জে সওজ ও এলজিইডি কর্তাদের চিঠি চালাচালিতেই ১০ বছর পার
সাইফুল ইসলাম, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) ||
২০২২-০৩-৩১ ০৭:২৮:০৪
দীর্ঘ ১০ বছর হলো সড়ক উন্নয়নের মুখ দেখেনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঢাকা সিলেট মহাসড়ক হতে রূপগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ে যাতায়াতের প্রধান সড়ক ভুলতা মুড়াপাড়া সড়কটির। সড়ক ও জনপদ আর এলজিইডির চিঠি চালাচালি আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সড়ক উন্নয়নের দাবীতে আবেদনেই কেটে গেছে বিগত ১০ বছর।
সূত্র জানায়, সড়কটি সওজের অধীনে থাকায় রাজধানীর রামপুরা থেকে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে সংযোগের জন্য ভুলতা আরএইচডি রামপুড়া ভায়া মুড়াপাড়া হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় পথচারী, বাসিন্দা ও গাড়ী চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভুলতা মুড়াপাড়া ৫ কিলোমিটার সড়কটি সর্বশেষ ২০১১ সালের শেষের দিকে পূর্ণনির্মান নির্মাণ হয়েছিল । এর পর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন প্রকার উন্নয়ন কাজ করেননি সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ । তবে মাঝে মধ্যে ইট সুরকী দিয়ে শিল্প মালিক আর জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে কোনরূপ মেরামত হলেও সড়কটি চলাচল অনুপযোগী রয়ে গেছে। অথচ মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলাচল করছে৷ এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে শিল্প কারখানা ও পাথর বালি বহনে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শুধুমাত্র ভুলতা মুড়াপাড়া সড়কের আশপাশেই রয়েছে প্রায় ৩০টির অধিক বৃহত্তর কোম্পানির শিল্পকারখানা। এসবের মাঝে রয়েছে, এসিআই সল্ট, সিম গ্রুপ, এনডিই, ঔষুধ উৎপাদন কোম্পানি এসকেএফ, গ্যালকো স্টীল, মীর সিমেন্ট, ওয়াটা ক্যামিকেল, ক্রিয়েটিভ পেপার মিলস,অনন্ত পেপার মিলস,রূপসী কনক্রিট, ছাত্তার জুট মিলস,আরএফএল কারখানা ও গোডাউনসহ বিভিন্ন বৃহত্তর কোম্পানি। এসব কোম্পানির মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত ভারী যান চলাচল করে প্রায় ২৪ ঘন্টা। ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কটিতে সারাদিনই যানজট তৈরী হয়ে থাকে। আবার এসিআই সল্ট কারখানার লবন ধোয়ার পর থাকা বালি মাটি রাতের আধারে ট্রাকে করে এ সড়কের পাশে ফেলে দিচ্ছে ঠিকাদার। এতে সড়কটি বর্ষা এলে পিচ্ছিল হয়ে যায়৷ লবন মাটির কারনে সড়কের পাশের গাছগুলো মরে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
এদিকে রূপগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী জামালউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়কটি আমাদের অধীনে ছিলো যখন তখন কাজ হয়েছে। এখন এটি সওজের অধীনে থাকার কারনে আমাদের রূপগঞ্জের অংশে কাজ করতে পারছিনা। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ করা যায়। আর এটিকে পুনরায় এলজিইডিতে দিলে ৪৮ ফুট প্রশস্ত করা হবে। যেহেতু ভারী যানবাহন চলে তাই সড়ক টেকসই করতে ১৮ ইঞ্চি আরসিসি ঢালাই করে সড়ককে মজবুত করা হবে। যাতে ভারী যানচলাচলেও কোন অসুবিধা না হয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল মেহেদী বলেন, রামপুরা ভুলতা সড়কটি কেন ঝুলে আছে তা জানা নেই। তবে নারায়ণগঞ্জ -১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী মহোদয়ের পাঠানো একটি চিঠির আলোকে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটি নির্দেশনা পেয়েছি৷ এ সড়কটি বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত না পেলে কোন কিছু বলা যাবে না। তবে দাপ্তরিক কাজ চলমান রয়েছে।
সূত্র জানায়, সড়কটি এলজিইডির অধীনে না থাকায় বিগত দিনে কাজ করাতে পারেননি স্থানীয় প্রশাসন। এতে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহালে স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজেই উদ্যোগ নেন সড়কটি মেরামতের। তবে সওজের মালিকাবাধীব থাকায় দাপ্তরিক জটিলতা তৈরি হয়। এ জটিলতা কাটাতে আবেদন আর চিঠি চালাচালিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে গত ১০ বছর ধরে উভয় দপ্তরের কার্যক্রম । আবার রামপুরা ভুলতা সড়ক নাম করন হলেও গত ১৮ বছরেও নির্মান হয়নি বালু নদীর উপর সেতু। এমনটি রামপুরা থেকে বালু নদী পর্যন্ত সড়কও দেখেনি আলোর মুখ। শুধু তাই নয়, সড়কটি নগর পাড়া থেকে ইছাখালী পর্যন্তও সংস্কার হয়নি একই অযুহাতে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও এ সড়কে চলাচলরত যানবাহন চালকরা৷
ভুলতার বাসিন্দা রাজবীনি ইসলাম বলেন, ভুলতা মুড়াপাড়া সড়কটি প্রশস্ত না করায় সারাদিনই যানজট লেগে থাকে। মানুষজন বাধ্য হয়ে হেটেই ভুলতা বাজারে চলে যায়৷ আবার শিক্ষার্থীরা পড়ে চরম বিপাকে।
মুড়াপাড়ার বাসিন্দা নুর আলম বলেন, মুড়াপাড়ার সড়কজুরে লবন মাটি পড়ে আছে। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই পিচ্ছিল হয়ে যায় সড়ক। তাই মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অহরহ। নগরপাড়ার বাসিন্দা আহমেদ রাসেল বলেন, রামপুরা ভুলতা সড়ক হবে হবে শুনছি। কিন্তু করে হবে তা জানিনা। এরমাঝে বালু সেতুর ২ পিলার করার পর রহস্যজনক কারনে বিগত ১৮ বছরেও আর কাজ হয়নি। আবার মুড়াপাড়া অংশে কাজ নেই গত ১০ বছর ধরে। ফলে ভোগান্তি সহ্য করেই সময় পার করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুব আলম বলেন, শিল্প কারখানার ভারী যান চললেও টেকসই সড়ক নির্মান করেনি সরকার৷ ফলে নির্মানের বছর না যেতেই ভেঙে খানাখন্দে পরিণত হয় সড়ক৷ এরপর থেকে সারাবছর ভাঙ্গাচোড়া সড়ক দিয়ে বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা যাতায়াত করি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ ১ রূপগঞ্জ আসনের এমপি, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক) বলেন, রূপগঞ্জের সব কটি সড়ক উন্নয়নের কাজ চলমান। টেকসই করতে মেগা প্রকল্পের আঁওতায় নেয়া হয়েছে। ভুলতা মুড়াপাড়া সড়কটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়া হলে অতি দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। মানুষের ভোগান্তি দূর করতে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357