নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র, নেই বৈধ কোন লাইসেন্স তবুও স্কুল ঘেঁষে গড়ে উঠা নাফিস ব্রিকস ইটভাটাটি দাপটের সাথে চালিয়ে আসছে সকল প্রকার কার্যক্রম। পৌরসভার দেবীপুর গ্রামের অবস্থিত ইটভাটাটি বাজার, স্কুল ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঘেঁষে দীর্ঘ বছর যাবৎ পরিচালনা করে আসছেন।
স্থানীয়রা বলছেন মালিক এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে ডরে অভিযোগ বা মুখ খোলেন না কেউ। এমনকি ইটভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও দেধারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। স্বাস্থ্য ঝুকিতে শিক্ষক শিক্ষার্থী, পথচারী, এলাকাবাসী ও বসবাসকারী পরিবারের সদস্যরা।
দ্রুত ইটভাটাটি অন্যত্র স্থান্তর করে এলাকাটি দূষিত পরিবেশের হাত থেকে রক্ষা করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ সহ সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। ইটভাটা কর্তৃপক্ষ বলছেন জেলা প্রশাসন ও কাস্টমস্ অফিসের ফান্ড নিয়মিত টাকা দিয়েই তারা ইটভাটাটি পরিচালনা করে থাকেন।
নাফিস ব্রিকস নামের ইটভাটার বৈধ তেমন কোন লাইসেন্স বা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। কয়লা দিয়ে হাওয়ার মাধ্যমে ইট পোড়ানোর আইন থাকলেও পরিবেশ দূষণকারী ফিক্সট চিমনিতে কাঠের খড়ি দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এর কারনে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইড ও কালো ধোঁয়া। ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ই্ট ভাটার পার্শ্বের দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সরকারী একটি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ এই পার্শ্ব দিয়ে চলাচলকারী বসবাসকারী লোকজনও রয়েছেন চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে পৌর সদরের দেবীপুর ১নং ওয়ার্ডে দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দেবীপুর উচ্চ বিদ্যালয় পাশাপাশি দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নামের সরকারী একটি দপ্তর রয়েছে। এই তিন প্রতিষ্ঠান ঘেষেই চলছে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই ইটভাটার ব্যবসা।
দুর্গাপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সহকর্মীদের নিয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখাযায়, সরকারী নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে স্থানীয় প্রভাবশালী দেবীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী দপ্তর ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও বসবাসকারী বসতবাড়ী ঘেষে নাফিস ব্রিকস নামের ইটভাটাটি স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। যা সেখানকার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দেখা যায়, ভাটায় ফিক্সট চিমনিতে কয়লার পরিবর্তে দেধারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার সাথে পড়ে আছে কাঠের খড়ির বিশাল স্তুপ।
দেবীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখাগেলো প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলায় ৫ম শ্রেনীর ক্লাশ চলছে, শিক্ষার্থীদের জোরে জোরে চিৎকারের করে পাঠদান করাচ্ছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সারোয়ার হোসেন। ক্লাশের ভিতরে প্রবেশ করে দেখা গেলো ধুলোর আস্তরন পড়ে আছে শিক্ষার্থীর বই খাতায়, শিক্ষার্থীদের মূখমন্ডল ও পরিধেয় পোশাক ধুলোয় সাদা হয়ে আছে। এমন অবস্থা দেখে কারন জানতে চাইলে ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সোহলী জান্নাত লাবনী জানায়, এইটা স্কুলের প্রতিদিনের নিয়মিত পরিবেশ। এ পরিবেশের মধ্যদিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে পড়াশোনা করে যাচ্ছি। পরিবেবেশের ক্ষতির ইটভাটার ধোয়া আর রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের ধূলা ও বিকট শব্দে প্রায় প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এই বিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি শিশুই শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভূগছে বলেও জানান ওই শিক্ষার্থী।
ক্লাশ পরিচালনাকারী সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান ও সারোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল ভবন ঘেঁষে নতুন ইট তৈরির কাজ চলছে। পাশেই মাটির স্তূপ। ক্লাসরুমের পাশ দিয়ে সব সময় বিভিন্ন যানবাহনে চলছে মাটি ও কাঁচা ইট পরিবহনের কাজ কাজ। ভাটার কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের অবাধ চলাচলে শিক্ষার্থী সহ সাধারন জনগন প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন। যানবান চলাচলে প্রকট শব্দ হওয়ার কারনে শিক্ষার্থীদের সাথে চিৎকার দিয়ে কথা বলে পাঠদান করা হয়।
এ বিষয়ে দেবীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার লায়লা আরজুমান জানান, ইটভাটার কালো ধোয়া শিক্ষার্থীদের চরমভাবে স্বাস্থ্যঝুকি’র মধ্যে ফেলেছে। ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি করেন তিনি।
ইটভাটার বৈধতার বিষয়ে পরিবেশবীদ রওনক জাহান মিতু বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন ২০১৩ নীতিমালা অনুযায়ী পৌর এলাকার অভ্যান্তরে কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী দপ্তর, চিকিৎসা কেন্দ্র, ঘর-বাড়ী, ফলজ ও বনজ বাগানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। পরিবেশ অধিদপ্তর বা তদসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই এলাকায় ইটভাটা স্থাপন বা পরিচালনা করার কোন লাইসেন্সও দিতে পারবেন না।
এ বিষয়ে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, দুর্গাপুর উপজেলায় নাফিস ব্রিকস নামের কোন ইটভাটাকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ই্ট প্রস্তুতকরা, ইটপোড়ানো ও সরবরাহ করা সম্পূর্ন আইন পরিপন্থি। দ্রুত এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
ধোয়া’য় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শিশু শিক্ষার্থীদের কি ক্ষতি হতে পারে জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মেডিকেল অফিসার ডা. অশোক কুমার বলেন, ইটভাটার ধোয়ায় শিক্ষার্থী সহ সকল মানুষেরই শ্বাসকষ্ট সহ ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়া ধূলাবালি’র কারনে হাঁপানি, চুলকানি সহ বিভিন্ন মারাত্মক চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই ও ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর সত্যতা স্বীকার করে নাফিস ব্রিকস ইটভাটার মালিক সেরিম রেজা তাবুল ইসলাম বাবু সাংবাদিকদের বলেন, ডিসি অফিস ও কাস্টমস অফিসে নিয়মিত টাকা দিয়ে দীর্ঘদিন এভাবেই ইটভাটা চালিয়ে আসছি। এ পর্যন্ত কোন প্রকার বাঁধা আসেনি বা কোন প্রকার সমস্যা হয়নি। উপজেলা প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক রেখে এভাবেই ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ডিসি অফিস থেকে আমাকে বলেছে। আমি সে অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা বলেন, এ বিষয়ে সুনিদিষ্ট কোন অভিযোগ পায়নি, তবে এবিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com