করোনায় চাকরি হারানো দুলালের সংসার চলে ফ্লাক্সে চা বিক্রি করে
সুলতান মাহমুদ চৌধুরী দিনাজপুরঃ ||
২০২১-১১-০৪ ১৩:২৫:০৩
একসময় ক্যামেরা হাতে নিয়ে নিখুঁতভাবে যার ছবি তোলা হয়েছিল প্রধান কাজ, এখন সেই হাতেই চায়ের ফ্লাস্ক আর অন টাইম গ্লাস নিয়ে শহরের রাস্তা দিয়ে ঘুরে চা বিক্রি করেন দিনাজপুর শহরের পরিচিত দুলাল হোসেন বয়স( ৪২)। ছোটবেলা থেকেই দিনাজপুর ফটো স্টুডিও তে শখের বশে ছবি তোলার চাকরি শুরু করেন। এরপর দিনাজপুরের জুয়েল কালার ফটো স্টুডিও এবং সর্বশেষ সান ফটো স্টুডিও তে ছবি তোলায় ছিল প্রধান কাজ।
ভয়াবহ করোনার কারণে দেশের যখন সকল দোকানপাট বন্ধ করে দেয় সরকার সেই সময় স্টুডিওগুলো বন্ধ হয়ে যায়। জীবন-জীবিকার তাগিদে ৩২ বছরের ফটো স্টুডিও ছবি তোলার কাজের চাকরিটিও চলে যায়। উপায়ন্তর না পেয়ে একমাত্র বিধবা মা এবং একমাত্র পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া এক ছেলেকে নিয়েই তার সংসার। পরিবারের তিনজন হচ্ছে তার সদস্য শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও হাতের কারিশমায় তার ছবি তোলার কাজটি ছিল নিখুঁত। চাকরি হারিয়ে যখন দিশেহারা হয়ে পড়লেন তখনই সে বেছে নিলেন ফ্লাক্স করে লাল চা বিক্রি। নিজের ব্যবসা সকাল দশটা হওয়ার সাথে সাথেই বাড়ি থেকে বৃদ্ধা মা সুন্দর করে লাল চা তৈরি করে ফ্লাক্স হাতে দিয়ে ৪২ বছর বয়সী ছেলের দুলালকে শহরে পাঠিয়ে দেয় । শহরের অলিতে গলিতে চা বিক্রি করেই চলে এখন তার সংসার। প্রতিদিন সে একশত কাপ চা বিক্রি করে ৫০০ টাকা বিক্রি হয়। একশত কাপ চা তৈরি করতে তার খরচ হয় ১২০ টাকা আর প্রতিদিন লাভ হয় ৩৮০ টাকা। এই লাভের টাকা দিয়েই তার সংসার চলে। তবে সঞ্চয় তেমন কিছু নেই দুলাল হোসেনের।
দিনাজপুর শহরের ঘাসিপাড়ার দুলাল হোসেন তার বিধবা মা আর একমাত্র ছেলেকে নিয়েই ঘাসিপাড়ায় বাবার রেখে যাওয়া বাড়িতেই বসবাস করেন।
দুলাল হোসেনের স্ত্রী ২০১৬ সালে এক দুরারোগ্য আক্রান্ত হয়ে মারা যান । বাবা আমিনুল ইসলাম ২০০৮ সালে হঠাৎ করেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোকগমন করেন।
দিনাজপুর প্রেসক্লাবের মনোয়ার হোসেন জানান কিছুদিন আগেও দুলাল স্টুডিওতে চাকরি করতো সেই চাকরি হারিয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে হাতে চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় চা বিক্রি করেন। তবে তার চা অনেক ভালো প্রতিদিন আমাদেরকে প্রেসক্লাবে এসে চা বিক্রি করে।
ব্যবসায়ী বশির উদ্দিন বলেন এক সময় যার হাতের কারিশমায় ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা ছিল প্রধান কাজ। সেই হাত দিয়ে এখন চা বিক্রি করছে তবে চা বিক্রি করাটা তার কাছে সম্মানের পেশা বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তবে তার চায়ের প্রশংসা করতে হয় অনেক সুন্দর করে চা তৈরি করেন এবং ওয়ান টাইম গ্লাস চা বিক্রি করে।
চা বিক্রেতা দুলাল হোসেন বলেন চা বিক্রি করতে এখন আর আমার লজ্জা লাগে না, বা অপমান বোধ করি না কারণ জীবন-জীবিকার কাজ। এটি আমার একমাত্র এখন ব্যবসা প্রতিদিন ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা ইনকাম হয় এতেই আলহামদুলিল্লাহ। আমার বিধবা মায়ের হাতে তৈরি করা চা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি। অনেকে প্রশংসা করে আগের ছবি তোলার কাজ করলেও এখন চা বিক্রি করছি নিজের ব্যবসা নিজের মতন করে পরিচালনা করছি কারো কাছে জবাবদিহিতা নেই। আয়ের পরিমান অল্প হলেও অনেক ভালো আছি তবে আমি ইচ্ছা করলে প্রতিদিন ২ শত কাপ চা বিক্রি হয়ে যাবে কিন্তু আমার বিধবা মা আমাকে প্রতিদিন ১ শত কাপ চা তৈরি করে আমাকে পাঠিয়ে দেন মায়ের কথা মতোই আমি চলি মা যতদিন বেঁচে আছেন তাঁর নির্দেশিত পথেই আমি চলব। আমার ছেলে এখন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র অনেক মেধাবী। আমার ছেলে জীবন পরিচালনা করার জন্য আমাকে আরো একটি বিয়ে করতে হবে পরিকল্পনা আছে।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com