মহিলাদের সংসারের কাজের ফাঁকে নিপুণ হাতে সুতা-কাপড় দিয়ে খেলনা তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে আব্দুলপুর গ্রামে ৫ শতাধিক নারী। মায়েদের পাশাপাশি স্কুল ও কলেজগামী ছাত্রীরাও এই হাতের কাজে বেশ পটু হয়ে উঠেছে ।
তারা সুতার পুতুল, অক্টোপাস, কেটারপিলা, হাতি, ফ্রক, আম, কাঠাঁল বইসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করেন। কেউ বা সংসারের কাজের ফাঁকে আর কেউ বা লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। তাদের তৈরি সুতা ও কাপড়ের পুতুল এখন যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে-বিদেশে।
ওই গ্রামের পুতুল তৈরির কারিগর মনিকা রানী দাস জানান, প্রায় সাড়ে চার বছর আগে এবি ক্রুসেড নামে সুতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আমি পুতুল তৈরির ধারণা নিয়ে সুতা এনে খেলনা তৈরির কাজ শুরু করি। ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। এভাবে আস্তে আস্তে আমি বাড়িতে বসে সংসারের কাজের ফাঁকে খেলনা তৈরি করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে এগুলো সরবরাহ করি। আস্তে আস্তে ভালো দাম পেতে শুরু করি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক নারীই সুতা-কাপড়ের খেলনা তৈরি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর আমি কিছু টাকা ঋাণ নিয়ে বেশি করে সুতার কাঁচামাল সংগ্রহ করি। পরে ধীরে ধীরে সবাইকে এই কাজে উদ্ধুদ্ধ করি। বর্তমানে আমার গ্রামে দুইজন সুপারভাইজারের অধীনে ৫ শতাধিক নারী কারিগরা পুতুল তৈরি করে অতিরিক্ত টাকা আয় করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
আব্দুলপুর বানিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী মনি বেগম বলেন, বুনন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মনিকা রানী দিদির কাছে কলেজে পড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে খেলনা তৈরি করি। এ থেকে ভালো টাকা উপার্জন করতে পারছি। তা দিয়ে কলেজে আসা-যাওয়ার পাশাপাশি ছোট-খাট বায়না পূরণ করতে পেরে ভালোই লাগছে।
একই গ্রামের কৃষক রহমান মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম তিন সন্তানের মা। তার এক ছেলে কলেজে ও অপর দুই ছেলে হাই স্কুলে পড়ছেন। তার স্বামীর আয় দিয়ে সংসার ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এখন ঘরের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বুননের কাজ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন ও সংসারের কিছুটা সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন তিনি।
সুপারভাইজার ললিতা রানী রায় জানান, এবি ক্রুসেড থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের খেলনার নমুনাসহ সুতা তুলা ও কাপড় সরবরাহ করে থাকি। সেই নমুনা কারিগরদের হাতে দিলে আমাদের খেলনার চাহিদা থাকে। পরে খেলনা তৈরি করে আবার এবি ক্রুসেড প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হয়।
তারা আরও জানান, তৈরিকৃত প্রতিটি খেলনার মূল্য ১৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত— নির্ধারণ করা হয়। একজন কারিগর সংসারের কাজ করেও প্রায় পাঁচটি পর্যন্ত— পুতুল তৈরি করতে পারেন।
এবি ক্রুসেড এর মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, বর্তমানে চিরিরবন্দরে দুইজন সুপাইভাইজারের আওতায় প্রায় ৫ শতাধিক কারিগর কাপড় ও সুতার খেলনা তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের তৈরি পুতুল আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানীসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দীকা বলেন, নারীরা এভাবে নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করা সত্যিই প্রশংসনীয়। স্বামীর আয়ের পাশাপাশি স্ত্রীর আয়ে পরিবারে সচ্ছলতা আসে। এভাবে নারীরা এগিয়ে এলে গ্রামে গ্রামে বিপুল কর্মস্থান তৈরি করা সম্ভব।
দিনাজপুর মহিলা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মুর্শেদ খান বলেন, দিনাজপুর বিভিন্ন প্রত্যান্ত অঞ্চলের নারীদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ কারিগর তৈরী করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় চিরিরবন্দর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের নারীরা হাতের নিপুন ঘাথুনির মাধ্যমে সুতার পুতুল তৈরী করে নিজেরদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্ভি হচ্ছে।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com