লালমনিরহাটে গুচ্ছগ্রামে ৮০টি ঘর পরিত্যাক্ত

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: || ২০২১-০৯-২৪ ২৩:৪১:৩৮

image

‘ভারতের ভিতরে একখন্ড বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত দেশের বহুল আলোচিত দহগ্রাম ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের ১৩০টি ঘরের ৮০টি ঘরেই গত ৪ বছর ধরে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বাকি ঘর গুলোতে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করলেও তাদের প্রতিনিয়ত নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বন্যার পানিতে অধিকাংশ ঘর থেকে মাটি সরে গেছে। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত এ গুচ্ছগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটিও ধসে গেছে। ধসে গেছে সেতুর সংযোগ সড়ক। রাস্তা, সেতু মেরামত না করায় আর ধসে যাওয়া ঘরের মাটি পুনরায় ভরাট না করায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে গুচ্ছগ্রামটি।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চার বছর আগে গুচ্ছগ্রামটি নির্মাণে মাটি ভরাট করতে ব্যয় করা হয়েছে ৫০০ মেট্রিক টন চাল। ঘর নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। ১৩০টি ভূমিহীন পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হয় গুচ্ছগ্রামের এসব ঘর।

গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারীদের অভিযোগ, গুচ্ছগ্রামে মাটি ভরাটের কাজ করেছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা (পিআইও) ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। নিয়ম অনুযায়ী নিরাপদ দূরত্ব থেকে শ্রমিকের মাধ্যমে মাটি সংগ্রহ ও ভরাট করার কথা ছিল। কিন্তু তারা গুচ্ছগ্রামের পাশেই ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে তা দিয়ে গুচ্ছগ্রামটিতে মাটি ভরাটের কাজ করেছিলেন। এ কারণে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে গুচ্ছগ্রামের ঘরগুলো থেকে বালু ধসে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদও করেছিলেন, কিন্তু তাদের প্রতিবাদ কোনো কাজে আসেনি। গুচ্ছগ্রামের পাশে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা কথা থাকলেও শুধু কিছু জিও-ব্যাগ ফেলে বরাদ্দের সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
গুচ্ছগ্রামের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, তাদের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক ও সেতুর সংযোগ সড়ক বন্যার পানিতে ধসে যাওয়ায় কষ্ট করে বসবাস করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে একাধিকবার আবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালিয়ে যারা জীবনযাপন করেন, তারা গুচ্ছগ্রামের ঘর ফেলে অন্যত্র বসবাস করছেন। তিনি আরো বলেন, ধসে যাওয়ায় সেতুর সংযোগ সড়কে আমরা নিজেরাই বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছি।'

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ফাতে বেগম অভিযোগ করেন, ঘর থেকে বালু ধসে গেছে, তাই ঘরে বসবাস করতে পারছেন না। গাইড ওয়াল থাকলে ঘর থেকে মাটি ধসে যেত না। অধিকাংশ মানুষ গুচ্ছগ্রামের ঘরে বসবাস করতে পারছেন না। যারা এখন বসবাস করছেন, তারাও ঘর ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গুচ্ছগ্রামের আরেক বাসিন্দা শামসুল ইসলাম জানান, গুচ্ছগ্রামটি নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। সে কারণে তারা ঘরগুলোতে বসবাস করতে পারছেন না। তিনি এখানে একটি ঘর পেয়েছেন কিন্তু তিন মাস বসবাস করার পর তা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। 
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, 'গুচ্ছগ্রামটি তিস্তা নদীর পাড়ে। এ কারণে বন্যার সময় এই গ্রামটি প্লাবিত হয়। রাস্তা ও সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ায় গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারীরা সমস্যায় পড়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কাজের সুবিধার জন্য শ্রমিকের পরিবর্তে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে গুচ্ছগ্রামে মাটি ভরাটের কাজ করা হয়েছিল। চেয়ারম্যান কামাল হোসেন আরো বলেন, প্রকল্পে গাইড ওয়াল ধরা ছিল না। আমরা বাঁশের পাইলিং করে জিও-ব্যাগ ফেলে গু”চ্ছগ্রামের মাটি ধসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে একটি প্রোটেকশন ওয়ার্ক করেছিলাম।'

পাটগ্রাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা উত্তম কুমার নন্দী বলেন, এটা অনেকদিন আগের কাজ, তাই তেমন কিছু মনে নেই। তবে কাজটি ইউপি চেয়ারম্যান করেছিলেন।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। সরকারি গুচ্ছগ্রামগুলো নিয়ে বর্তমানে কাজ করছি। দহগ্রামে সরকারি গুচ্ছগ্রামে যাতায়াতের সড়ক ও সেতু মেরামত করা হবে শিগগির।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com