বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১২,৪০০ কোটি টাকা সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) নিয়ে বাজারে আসে জাপান ভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি জাপান টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি। তবে বিনিয়োগের তিন বছরের মধ্যেই তিক্ত অভিজ্ঞতায় পড়েছে কোম্পানিটি।
জাপান টোব্যাকো বলছে, তিন বছরে সিগারেট বিক্রি উল্লেখযোগ্যহারে কমে যাওয়ার পাশাপাশি বাজার অংশীদারিত্বেও ৭.২ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে তাদের। ২০১৮ সালে আকিজ গ্রুপের ঢাকা টোব্যাকো অধিগ্রহণের আগে দেশে তাদের বাজার অংশীদারিত্ব ছিল ১৯.৮ শতাংশ। বর্তমানে তা ১২.৬ শতাংশে নেমেছে।
এর পেছনে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর বাজার আধিপত্য এবং তাদের প্রতিযোগিতা বিরোধী কার্যকলাপকে দায়ী করছে জাপান টোব্যাকো লিমিটেড। পাশাপাশি সরকারের করনীতির কারণেও তারা পিছিয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন এর কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে বাজার ধরতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ে নিজেদের টিকে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনে চিঠি দিয়েছে জাপান টোব্যাকো। চিঠিতে সিগারেটের বাজার দখলের অসম প্রতিযোগিতায় ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) তাদের কোণঠাসা করে রেখেছে বলে দাবি করে তারা।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে একই রকম অভিযোগ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের কাছে চিঠি দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত। প্রতিযোগিতা সমস্যার পাশাপাশি বাংলাদেশে কর কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভবিষ্যতে জাপানের অন্য কোনো বিনিয়োগ আসা নিয়েও হুঁশিয়ার করেছেন তিনি।
জেটিআইয়ের কর্পোরেট কম্যুনিকেশন বিভাগের প্রধান শেজামী খলিল বলেন, “বাজারের শীর্ষস্থান দখল করে রাখা একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতা বিরোধী ক্রিয়াকলাপ এবং আধিপত্বশীল আচরণের মুখোমুখি হওয়ায় আমরা একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। অভিযোগটি সংবেদনশীল হওয়ায় এবং তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে আমরা সক্রিয়ভাবে কোনও তথ্য প্রকাশ করতে অক্ষম”।
যদিও জেটিআইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে এর জন্য কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা এবং বাজার নীতিকে দায়ী করছেন বিএটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, দেশের বাজার না বুঝে সিগারেটের ফ্লেভার পরিবর্তন ও সঠিক বিপণন কৌশল না থাকায় পিছিয়েছে কোম্পানিটি।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের চেয়ারম্যান গোলাম মইনউদ্দিন বলেন, “জাপান টোব্যাকোর অভিযোগের পর আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখেছি। তাদের হাই অফিসিয়ালের সঙ্গে আমাদের হাই অফিসিয়াল যোগাযোগ করেছে। সব অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে”।
“ভবিষ্যতে দেশে এফডিআই আসার ক্ষেত্রে জেটিআইয়ের অভিযোগ যেন কারণ বা বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায় সেজন্য তাদেরকে আমরা সহায়তা করার কথাও বলেছি,” যোগ করেন গোলাম মইনউদ্দিন।
বিশ্বের বৃহত্তম পাঁচ তামাক কোম্পানির একটি জাপান টোব্যাকো (জেটি) গ্রুপ ২০১৮ সালে ১২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকায় (১৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার) আকিজ গ্রুপের সিগারেট তৈরির সম্পূর্ণ ব্যবসা কিনে নেয়। এই বিনিয়োগ ছিল বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে একক বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগ।
দেশের বাজারে জাপান টোব্যাকো বর্তমানে এলডি, নেভি, শেখ, কে২, রিয়েল সহ কয়েকটি ব্র্যান্ডের সিগারেট বিক্রি করছে। অন্যদিকে বিএটিবি ক্যাপ্সটান, গোল্ডলিফ, বেনসন, স্টার, রয়্যালস, ডার্বি, পাইলট, হলিউড ব্রান্ডের সিগারেট বিক্রি করছে।
বিএটিবির প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাপানা টোব্যাকোর বাংলাদেশে আসার আগে থেকেই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে দেশে টোব্যাকোর বাজারে ৭০ শতাংশের বেশি বাজার দখলে থাকা বিএটিবি। সর্বশেষ ২০২০ সালে আগের বছরের তুলনায় ৫০০ কোটি শলাকারও বেশি অতিরিক্ত সিগারেট বিক্রি করেছে কোম্পানিটি।
এর আগের বছর ২০১৯ সালে কোম্পানিটির সিগারেট বিক্রি বাড়ে প্রায় ১০০ কোটি শলাকা। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও সিগারেট বিক্রিতে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি রয়েছে তাদের।
এই তিন বছরে কোম্পানিটির টার্নওভারও ২৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ব্যবসার এ প্রবৃদ্ধি আগের ধারাবাহিকতায় বলেই জানিয়েছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা। জাপান টোব্যাকোকে কোণঠাসা করে তাদের কোনো কর্মকাণ্ড নেই বলে জানান তারা।
বিএটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “জাপান টোব্যাকো আসার আগে থেকেই ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ছিল বিএটিবির। দেশের বাজার বুঝে মার্কেটিংয়ের কারণে আমাদের ব্যবসা বড় হচ্ছে্। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের বাজার দখল করে নয়”।
বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালিকানা পরিবর্তনের পর ঢাকা টোব্যাকোর সবচেয়ে বেশি বিক্রিত নেভি সিগারেটের সাইজ পরিবর্তন করেছে জাপান টোব্যাকো। এই সময়ে একই মানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ও আবুল খায়ের টোব্যাকোর দুটি ব্র্যান্ড বাজার সম্প্রসারণ করেছে। অন্যদিকে করোনাকালীন সময়ে কিছুদিন বাজারে নিস্ক্রিয় ছিল জাপান টোব্যাকো।
এছাড়া বাংলাদেশে কার্যক্রম চালালেও উচ্চপদে বিদেশীদের নিয়োগ দেয়ার কারণে দেশের মানুষের চাহিদা বুঝে পণ্য উৎপাদন ও মার্কেটিং করতে না পারা তাদের পিছিয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “কোনো মার্কেটে দখল নিতে চাইলে প্রথমেই ওই বাজার বুঝতে হয়। বাজারের কনজুমারদের স্বাদ বুঝে এগোতে হয়। জাপান টোব্যাকোকে বিষয়টি ভেবেই এগোতে হবে”।
এদিকে জাপান টোব্যাকোর অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত করছে প্রতিযোগিতা কমিশন। তদন্ত শেষ হলে দুই পক্ষকে নিয়ে শুনানির আয়োজন করবে প্রতিষ্ঠানটি। শুনানি শেষে অপরাধ প্রমাণিত হলে বিএবিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন কমিশনের কর্মকর্তারা ।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, “অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে শুনানি করে রায় দেয়া হবে”।
বিএটি ও জেটিআই গ্রুপ বিশ্বব্যাপী দুটি প্রথম সারির ট্যোব্যাকো কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৮০টি দেশে কার্যক্রম রয়েছে বিএটির। সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্যবসার ১১০ বছর উদযাপন করেছে কোম্পানিটি।
অন্যদিকে জাপান টোব্যাকো বিশ্বের ১৩০টি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করে প্রায় ৬০ হাজার কর্মী। তারা উইনস্টন, ক্যামেল, মেভিয়াস ও এলডি ব্র্যান্ডের সিগারেট বাজারজাত করে, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচিত ব্র্যান্ড। বিএটির মতোই তামাকের পাশাপাশি জাপান টোব্যাকো ই-সিগারেট বাজারজাত করে। জেটিআই গ্রুপে জাপান সরকারের ৩৩.৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com