পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের নকশায় জটিলতা দেখা দেয় ২০১৭ সালে। পিলারগুলোর পাইলিংয়ের শেষ প্রান্তের কিছুটা নিচে ৩৮০ থেকে ৪০০ ফুট গভীরতায় ধরা পড়েছে কাদার স্তর। পরের বছর আরও আট পিলারের নকশায় একই সমস্যা দেখা দেয়। ফলে সেতুটির ২২টি পিলারের নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়। এতে দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্পটি পিছিয়ে যায় তিন বছর।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নকালে ৪২ পিলারের সবগুলোর তলদেশে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়নি। মাত্র ১১টি পিলারের তলদেশের মাটি পরীক্ষা করেই প্রণয়ন করা হয় ৪২টি পিলারের নকশা। এতে নকশায় বর্ণিত মাটির গুণাগুণের সঙ্গে পদ্মার তলদেশের মাটির বর্তমান অবস্থা মিলছে না। এছাড়া পিলার নির্মাণের মূল স্থানের মাটি ঠিক রাখতে নির্ধারিত স্থানের ৫০ মিটার আগের বা পরের স্থানের মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়। এতে মূল পিলারের স্থানের মাটির গুণাগুণ সম্পর্কে প্রকৃত চিত্র নকশা প্রণয়নকালে জানা যায়নি।
পরে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করে ২২টি পিলারের নকশা সংশোধন করতে হয়। এতে ২২টি পিলারের নিচে পাইল করা হয়েছে সাতটি করে। তবে বাকি ২০টি পিলারের পাইল নির্মাণ করা হয়েছে ছয়টি করে। এছাড়া ২২টি পিলারের বাড়তি পাইলটি স্ক্রিন গ্রাউটিং তথা খাঁচকাটা করা হয়েছে। আর নকশা ত্রুটির সমাধান খুঁজতে গিয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করা যায়নি।
যদিও নকশার ভুল শুধু পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেই হয়েছেÑএমনটি নয়। খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন রূপসা রেল সেতুর নকশায়ও প্রায়ই একই ধরনের ভুল ধরা পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রূপসা রেল সেতুর খুলনা প্রান্তের ভায়াডাক্ট অংশে প্রথম একটি ৪০ মিটার গভীর দেড় মিটার প্রস্থ ডায়া টেস্ট পাইল করা হয়। পরে এর লোড টেস্ট করা হলে ফলাফল সন্তোষজনক হয়নি। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আবার একই স্থানে ৪০ মিটারের পরিবর্তে ৫২ মিটার দৈর্ঘ্যরে আরেকটি পাইলের নকশা জমা দেয়। সেটিও লোড টেস্টে ব্যর্থ হয়। পরে পিলারের নিচের মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে দেখা যায় পাইলের শেষ প্রান্তে রয়েছে কাদার স্তর। পরে সেতুটির নকশা সংশোধন করা হয়।
শুধু রূপসা রেল সেতুই নয়, খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ অংশেও নকশাগত ত্রুটি রয়েছে। এ রুটে ছোট ও মাঝারি ৩১টি সেতু ও ১০৭টি কালভার্ট রয়েছে। তবে মাটির গুণাগুণ খারাপ থাকায় তা সংশোধন করা হয়। এতে পাইলের সংখ্যা বেড়ে যায়।
এদিকে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নে রয়েছে ত্রুটি। রেল সংযোগ অংশের কাজ শুরুর পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চারটি পরীক্ষামূলক পাইল নির্মাণ করে। তবে এগুলো লোড বেয়ারিং ক্যাপাসিটি (ভারবহন ক্ষমতা) চাহিদা অনুযায়ী হয়নি। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি বিষয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাই করে পাইল পুনঃডিজাইন করতে হয়। এতে কয়েক মাস বিলম্বিত হয় রেলপথ নির্মাণকাজ।
এছাড়া সম্প্রতি পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ অংশের নকশায় সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ভায়াডাক্টের (উড়ালপথ) পি২৫-১ ও পি২৫-২ পিলারে সমস্যা বেশি। এ পিলার দুটি নির্মাণ করতে গিয়ে সংযোগ সড়কের কিছু অংশ কেটে ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি)। এছাড়া এই পিলার দুটির উচ্চতা ভূমি থেকে ছয় মিটারের কম, যা জাজিরা সংযোগ সড়কে কাভার্ডভ্যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিকেই নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়।
ত্রুটিপূর্ণ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আরেকটি উদাহরণ আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। কাজ শুরুর পর এর আওতায় নতুন আইটেম হিসেবে ব্রিজ ও কালভার্টের অ্যাপ্রোচ (সংযোগ সড়ক) এবং লো-এমব্যাংকমেন্টে (নিচু বাঁধ) বালুর পাইল করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশে মাটির গুণাগুণ খুবই নি¤œমানের হওয়ায় তা ব্ল্যাক কটন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেখানকার মাটি পৃথকভাবে ট্রিটমেন্ট করতে হয়।
এর বাইরে রাজধানীতে নির্মিত মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নকশায়ও ছিল ভুল। এতে উল্টো নকশায় ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে গাড়ি ডান হাতে চালিত হলেও ফ্লাইওভারটি বাঁ হাতে চালিত গাড়ির নকশায় তৈরি করা হয়েছে। এদিকে নবীনগর-আশুগঞ্জ সড়ক নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে রয়েছে ত্রুটি। এতে সড়কটির অ্যালাইমেন্ট কিছুটা পরিবর্তন করতে হবে। এতে জমি অধিগ্রহণসহ সব খাতেই কাজের পরিমাণ ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নও বিলম্বিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামছুল হক মনে করেন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ভুল বা ত্রুটির পেছনে দুই ধরনের কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলোÑদক্ষতা বা পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকা। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নকশা বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন ঠিকমতো যাচাই-বাছাই করতে পারে না। আবার অনেক সময় সম্ভাব্যতা যাচাই কাজে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোও ফাঁকি দেয়। তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে মাঠপর্যায়ে নিজে না গিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে করে থাকে। এতেও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ত্রুটি ধরা পড়ে।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com